Pages

Saturday, February 2, 2019

ক্লেপ্টোমেনিয়া

মূল গল্প: An Insignificant Crime
লেখক: Maxine O'Callaghan
অনুবাদ নয়, “ছায়া অবলম্বনে” লেখা।

***

“না অনির্বাণ, আটকাতে চেষ্টা কোরো না। আজ মেয়েটাকে আমি ধরবই।”

“সব জেনেও?”

“কী করব বলো? যেটা অন্যায় সেটা অন্যায়।”

“না দেখুন, আপনি জানেন যে উপায় আছে...”

“তুমি যেটাকে বলছ সেটা উপায় নয়। সেটা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া। সেটা তুমিও জানো।”

“না, দেখুন, এটা তো আসলে একটা অসুখ, তাই না? আজকের কাগজেও বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে। ডাক্তাররাও বলেছেন...”

“আমি জানি। কিন্তু অসুখের দোহাই দিয়ে তো সবকিছু চলতে পারে না, তাই না? আজ যদি আমি খুন করে বলি যে রোজ মানুষ না মারলে আমার রক্তচাপ বেড়ে যায়, তাহলে আইন সেটা মেনে নেবে?”

“দু’টো এক হল? এটা আর মানুষ খুন এক? এটা তো...”

“জানি। এটা সামান্য চুরি। এতে কারুর ক্ষতি হচ্ছে না, অন্ততঃ আমার তো হচ্ছেই না। কিন্তু যদি হত? যদি কাল কারুর ক্ষতি হয়?”

*

“আমার কন্যা রঞ্জিনী ক্লেপ্টোমেনিয়া রোগে আক্রান্ত। ডাক্তাররা বলিয়াছেন ইহার কোনওরূপ চিকিৎসা অসম্ভব। প্রমাণ সহযোগে এই নম্বরে ফোন করিলে সাধ্যমত ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব আমার।”

ইত্যাদি ইত্যাদি। সঙ্গে মেয়ের ছবি। আজকাল সাধুভাষা বোধহয় শুধু বিজ্ঞাপনে আর পাঁজিতেই চলে।

*

মালিকের সঙ্গে সেই কথাই হচ্ছিল। রঞ্জিনী মেয়েটা অনেকবার আমাদের দোকানে এসেছে। প্রতিবারই কিছু না কিছু তুলে নিয়ে গেছে। ওর বাবাকে জানালে দোকানের নামে সোজা ট্রান্সফার করে দিতেন। প্রমাণও লাগেনি কোনওদিন। আজকাল সেক্রেটারিকে বললেই হয়ে যায়। আর একশো-দু’শো টাকার জন্য কীই বা প্রমাণ চাইবেন?

সত্যি কথা বলতে কী, চাইতে আমারও অস্বস্তি হয়, কিন্তু মালিকের আদেশ। হিসেবে সমস্যা হয় নাকি।

তবে এবারে অতীনবাবু বেশ খেপে গেছেন। বলছি না সেটা অন্যায্য, বিশেষ করে ওঁর মত নীতিবাগীশ মানুষের পক্ষে। কিন্তু যতই হোক্‌, মেয়েটা অসুস্থ, একটু হয়ত...

কারুর কারুর মুখ দেখে বয়স বোঝা যায়। রঞ্জিনীকে দেখে মনে হয় কুড়ির পর আর বাড়েনি, যদিও আমি এখন জানি যে পঁয়ত্রিশ, মানে ঐ আমারই বয়সী।

মেয়েটার মুখের মধ্যে একটা অদ্ভুত নিষ্পাপ মায়াবী ভাব আছে। হয়ত সেই কারণেই সন্দেহ করতে ইচ্ছে করে না। আর সত্যিই তো, অসুস্থ তো, সত্যি সত্যি তো আর চোর নয়...

তবে ঐ, আমি ম্যানেজার হলেও কর্মচারীই, তার বেশি নই। আমি যতই বলি, মনে হয় না আজ ছেড়ে দেবেন।

*

আমাদের রায়চৌধুরী এম্পোরিয়মে ছ’টা সিসিটিভি ক্যামেরার তিনটে চলে, নয়ত খরচে পোষায় না। গোটা দু-তিন চালিয়ে ক্যাশ কাউন্টারের পাশে মনিটর চালু রাখলেই খদ্দের ভাবে যে সবকটা টিভি চলছে।

তবে আজ অতীনবাবু ছ’টাই চালাতে বলেছেন। মনে হচ্ছে আজ একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বেন।

একটার পর একটা আইলে অলসভাবে হাঁটছিল রঞ্জিনী। একটা টর্চ তুলে ঘুরিয়েফিরিয়ে দেখে রেখে দিল। তারপর বোধহয় – ওটা কী? বাল্ব বোধহয়, না না, ওটাও রেখে দিল। তারপর আবার হাঁটতে লাগল, ইলেক্ট্রিকাল প্রডাক্টের সেকশন থেকে বেরিয়ে কিচেন অ্যাপ্লায়েন্সের দিকে...

*

স্পষ্ট দেখলাম একটা চামচের সেট তুলে শালের আড়ালে ঢোকাল রঞ্জিনী। সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন অতীনবাবু, তবে ততক্ষণে আমার যা ভাবার ভাবা হয়ে গেছে। চাকরি গেলে যাবে, পুলিশ ডাকতে দেব না।

“আপনি যদি কিছু করেন আমি এখনই চাকরি ছেড়ে দেব।”

“তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছ?”

“না, ভয় দেখাচ্ছি না। ম্যানেজার আপনি পাবেন। আর আমিও চাকরি পাব। কিন্তু আমাকে এখানে আপনার দরকার।”

কথাটা ডাহা মিথ্যে, কারণ চাকরির যা বাজার, মনে হয় না কিছু জুটবে বলে।

“বাজে বোকো না। তুমি আসার আগেও রায়চৌধুরী এম্পোরিয়ম চলেছে, তুমি গেলেও চলবে।”

“হ্যাঁ, কিন্তু আপনি ভাবুন কী কী হারাবেন। এখানে চাকরি না করলে আমি কলকাতায় থাকব না, বাইরে চলে যাব।”

চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন অতীনবাবু।

“দেখুন, দোকানের ম্যানেজারকে বিয়ে করার পর থেকে আপনি মেয়েকে ক্ষমা করতে পারেন নি। এটা আমি জানি। আমি এও জানি মেয়ে-জামাই নিয়ে আপনার বিশেষ মাথাব্যথা নেই, তবে আমি গেলে আপনি নাতিকেও হারাবেন। নীতি আঁকড়ে টানতে পারবেন তো তখন বাকি জীবনটা?”

এখনও মুখ একই রকম থমথমে। কেলেঙ্কারি করলাম কিনা কে জানে। ভদ্রলোক খেদিয়ে দিলে কে চাকরি দেবে আর বৌ-বাচ্চাকে কী খাওয়াব কোনও ধারণা নেই।

“যা ভাল বোঝো করো।”

*

সন্ধ্যেবেলা সেক্রেটারি ভদ্রলোককে ফোন করলাম। অতীন রায়চৌধুরীর মেয়ে অতীন রায়চৌধুরীরই দোকান থেকে একশো টাকার চামচ নিয়েছে, তাই নিয়ে বলতে অস্বস্তি হচ্ছিল।

কিন্তু ঐ, কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম।

No comments:

Post a Comment