Pages

Thursday, February 27, 2020

অথ ডাকটিকিট কথা


ছোটবেলায় খাম বিশেষ ব্যবহার করিনি। স্ট্যাম্প অ্যালবাম ছিল বটে একটা, তবে তাতে বেশিরভাগ দেশের পাতাই ফাঁকা ছিল, আর ছিল প্রচুর ডুপ্লিকেট। ঐ অ্যালবামের সঙ্গে ফ্রী কয়েকটা স্ট্যাম্প দিয়েছিল, ঐটুকুই। আমার শতরত্ন বাঁদরের হিসেবে দু’পাও হত না সম্ভবতঃ।

আর চিঠি যা লিখতাম সব ইনল্যান্ড লেটারে। ইনল্যান্ড লেটার এখনও পাওয়া যায় কিনা জানি না। অনেকদিন অবধি দাম ছিল বারো আনা (পঁচাত্তর পয়সা), পরে বোধহয় দেড় টাকা হয়। কিছুই না, একটা নীল কাগজ, যাতে দেড়পাতা চিঠি লিখে মুড়ে বন্ধ করে ওপরে ঠিকানা লিখলে চলে যায়।

আর ছিল পোস্টকার্ড (পনেরো পয়সা, তারপর পঁচিশ, শেষ মনে পড়ছে আট আনা)। আমার জীবনে দেখা প্রথম স্প্যাম পোস্টকার্ডেই। আমাদের বাড়িতে একবার এসেছিল, কার একটা বাণী, সেটা হাতে টুকে (!!!!!!!) দশজনকে পাঠালে বাড়ি ও জীবন ধনধান্যপুষ্পভরা হবে, নয়ত রাহু না কেতু কে একটা এসে কীসব জানি করবে।

যাকগে, এই গল্পটা স্ট্যাম্প নিয়ে। মাধ্যমিক অবধি বাংলা সেকেন্ড পেপারে চিঠি লিখতে হত, বাড়ির কাউকে বা বন্ধুদের। বাবা-মাকে “আপনি” আর বন্ধুদের “তুমি” লিখতে বলা ছিল। বন্ধুদের আবার “বন্ধুবরেষু” বলে সম্বোধন করতে বলত (বড়দের “শ্রীচরণেষু”, মায় “শ্রীচরণকমলেষু”)। পাশের বেঞ্চে বসা ক্লাসমেটকে কলকাতার দুর্গাপুজো নিয়ে চিঠি লিখতে বেশ অদ্ভুত লাগত।

এর পর আসল খেলা। চিঠির নিচে একটা আয়তাকার খাম আঁকতে হত। তার ওপর প্রাপকের নাম-ঠিকানা। আমি বরাবরই সততার পরাকাষ্ঠা, আমি বন্ধুদের ঠিকানা মুখস্থ করে রাখতাম। হয়ত ভাবতাম যিনি খাতা দেখবেন, ডেটাবেস থেকে নামের সঙ্গে ঠিকানা মিলিয়ে দেখবেন।

সহজ কথায়, মহা মূর্খ ছিলাম।

কিন্তু আসল মজা ছিল অন্য জায়গায়। খামের ওপর, ডান কোণে একটা ছোট্ট চৌকো বাক্স এঁকে ভেতরে লিখতে হত “ডাকটিকিট”।

সমস্যা হল, আমি ছিলাম পিটপিটে, রথ-পথ-মূর্তিকে দেব ভাবার বাতিক আমার চিরকালের, এই ডাকটিকিট ব্যাপারটা খুব সিরিয়সলি নিতাম। আমি জানতাম ভারতবর্ষের স্ট্যাম্প প্রায় কখনওই আড়াআড়িভাবে আয়তাকার হয় না, কাজেই অসম্ভব অস্বস্তি হত।
কী করা যায়? ওপরে-নিচে একটু বাড়িয়ে জিনিসটাকে চৌকো করার চেষ্টা করলাম। সমস্যা হল, এটা খামের অনেকটা জায়গা নিয়ে নিত। সেই বয়সে আমার হাতের লেখা ছিল প্রস্থে আমার সমান, কাজেই অতটা জায়গা নষ্ট করার প্রশ্নই ছিল না।
কাজেই শব্দটাকে ভাঙতে হল। এটা খুব সহজ ব্যাপার নয়, কারণ আমি এক শব্দ ভেঙে দু’লাইনে লেখার আমি ঘোরতর বিরোধী ছিলাম তখন। তাছাড়া কে না জানে, যে দু’লাইনে লিখলে ব্যাপারটা দাঁড়ায় “ডাক টিকিট”? দেহরি-অন-শোনের মত হাইফেন দেওয়া নাম না হলে আমি ম্যাপের ওপরেও এক লাইনে লিখতে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলাম।

অতএব।

No comments:

Post a Comment