ঐ মেয়েটা গোল্ডস্পট খেত।
আমি খেতাম রঙের মাথায়, স্ট্র ছাড়া, সোজা বোতল থেকে। খেয়েই ঢেঁকুর তুলতাম, সশব্দে।
ঐ মেয়েটা এতই ইয়ে, যে ওর মা ওকে দুটো স্ট্র দিয়ে দিত, যাতে তাড়াতাড়ি শেষ হয়। অত আস্তে খেলে ঢেঁকুর ওঠার কথা নয়, তাই ওরও উঠত না। হাঁটতে হাঁটতে ব্রিজ অবধি গিয়ে হয়ত একটা ছোট্ট মেয়েলি ঢেঁকুর তুলত।
আমার বাড়ির ত্রিসীমানায় অবশ্য কোনো ব্রিজ ছিল না।
আমি বাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চুপচাপ বই পড়তাম। ঐ মেয়েটার বাড়ির পাশেই ছিল একটা মাঠ, বিশাল মাঠ। অতবড় মাঠ আমাদের পাড়ায় ছিল না। মাঠে মেয়েটা সাংঘাতিক জোরে ছুটত - কেউ ওর সঙ্গে পেরে উঠত না।
ঐ মাঠটায় কৃষ্ণচূড়া গাছ ছিল একটা। আমি তখন কৃষ্ণচূড়া গাছ চিনতামই না - আমটাম ছাড়া গাছ এমনিই চিনতাম না বিশেষ। ঐ গাছটা দেখে মেয়েটা কির'ম উদাস হয়ে যেত।
আমি খুব ইন্দ্রজাল কমিক্স্ পড়তাম। বাবা বাজারের শিশি-বোতলওয়ালার থেকে নিয়ে আসত, গোছা-গোছা, সেকেন্ডহ্যান্ড। ওর বাবা ওর জন্য আনত অমরচিত্রকথা, বাসস্ট্যান্ডের কাছের একটা অদ্ভুত বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত দোকান থেকে, যার আশেপাশে আর কোনও দোকান নেই।
এই মেয়েটা সাংঘাতিক দুষ্টু ছিল। একবার সেই বালতির ভেতর ব্যাটারিতে চলা নৌকো দেখছিল। ওর মা একটু অন্যমনস্ক হয়েছে, ব্যাস্! অমনি এদিক-সেদিক ঘুরতে চলল! মা ভাববে, টেনশন করবে, সে নিয়ে মাথাব্যথা নেই, চলল। অনেক ঘুরেটুরে "ভাবল", মা যে কোঅপারেটিভটা থেকে জিনিসপত্র কেনে, সেখানে যাই। ভাবল। যেন কত ভাবার বয়স হয়েছে ওর! ভাগ্যিস ছেলেধরার হাতে পড়েনি!
আমার মতই মেয়েটা র্যাশন দোকানে যেত। আমাদের র্যাশন দোকানে যের'ম গোল কমলা লজেন্স পাওয়া যেত, ওদেরটায় পাওয়া যেত হলুদ লজেন্স, মাছের মত দেখতে। খুব শস্তা, খুব সাধারণ, আজকালকার বাচ্চারা ছুঁড়েই ফেলে দেবে হয়ত! কিন্তু ও আমারই মত ভালবাসত লজেন্স খেতে।
আমি এই মেয়েটার স্বপ্ন অনেকবার দেখেছি। কিন্তু ওকে চিনতে পারিনি।
***
কাল স্বপ্নে আমি ওর বাড়ির সামনে গেছিলাম। স্বপ্নেই দেখা, তাই মেয়েটার আমাকে চিনতে পারার কথা নয় আদৌ। কিন্তু পারল দেখলাম। একটু বড় হয়েছে, পালিয়ে কোঅপারেটিভ যাওয়ার সময়কার থেকে। কিন্তু মুখটা একইরকম আছে। ও বুড়ি হলেও বোধহয় একইরকম দেখতে থাকবে। বা হয়ত ও বুড়ি হবেইনা - স্বপ্ন তো!
"তুমি?"
আমি ক্যাবলার মত দাঁড়িয়ে রইলাম, আর পায়ের কড়ে আঙুল দিয়ে চটি চটকাতে চেষ্টা করলাম।
"কি হল? বাড়ি এলে, কথা বলবে না?"
আবার চুপ। বাড়ির সামনে বাগান, ভেতরে দোলনা, সবই আছে, কিন্তু হলুদ রংটা নেই আর। একটু অস্বস্তি হচ্ছিল।
"চলো। কুলফি খাওয়াবে?"
"আমার অত পয়সা নেই।" বারো বছর বয়েসের ছেলের হাতে অত পয়সা থাকেও না।
"ঘটিগরম খাওয়ানোর পয়সা আছে?"
মাথা নাড়লাম।
সামনের সেই বিশাল মাঠটায় গেলাম। সমুদ্রের মত বড় মাঠ, কোনো শেষ নেই। সমুদ্রের মত গর্জনও। কিন্তু ও হাত ধরতেই অদ্ভুত শান্ত, চুপচাপ সব। সেই গাছটার নিচে বসলাম, যার নাম ও বলেছিল কৃষ্ণচূড়া, আর আমি কখনও দেখিনি বলে নাম জানতাম না।
তারপর সূর্য ডুবে গেল, আর অন্ধকার হল। আর ঘুম ভেঙে গেল।
***
মেয়েটা নির্ঘাত বড় হয়ে গেছে এতদিনে। ঘটিগরম বা অন্যকিছু খেয়ে ঝাল লাগে হয়ত, তারপর গোল্ডস্পট খোঁজে। গোল্ডস্পট তো আর পাওয়া যায় না আজকাল। হয়ত মাজা খায়, বা স্লাইস।
মাঠটা নিশ্চয়ই আছে কোথাও। কোথায়, জানি না। বা হয়ত বাড়ি হয়ে গেছে। ব্রিজ ভেঙে হয়ত মেট্রো স্টেশন বা কিছু। পরেরবার স্বপ্নে বাসের রূট দেখার চেষ্টা করব, বা দোকানের সাইনবোর্ড। তবে দেখলে চিনতে পারব। পারবই। আর বাড়িটাও।
আর তখন জিজ্ঞেস করব, "সেই মেয়েটা আছে?"
যদি জিজ্ঞেস করে "কোন্ মেয়েটা? নাম কি?"
বলব, "নাম জানিনা, কিন্তু ঐ যে, গোল্ডস্পট খেত, লজেন্সের র্যাপার ব্রিজের ফুটো দিয়ে ফেলত, ভীষণ জোরে ছুটত, আর ছোটবেলায় একবার বাজারে হারিয়ে গেছিল?"
well written and beautifully expressed.
ReplyDeleteironically,i can't read bengali.but i appreciate the sentiment behind that picture:)
lovely. daruuN.
ReplyDeleteAnonymous, this is a definite contender for the most unique comment I've ever received on my entire blog.
ReplyDeleteI'm not sure whether I should be happy, but I daresay mention I am.
Kudos to your sense of imagination, though.
i dunno what to say...i just wish...i could reach your level someday....someday! :D
ReplyDeletei somehow felt soooo happy reading this...i dunno why...alada kore bola dorkar..je bhalo legeche??
কির'ম যেন ! ভালো লাগল, কিন্তু অন্তহীন সিনেমাটা দেখে যে ফিলিংটা হয়েছিল, সেইরকমই লাগছে !
ReplyDelete"Kudos to your sense of imagination, though"
ReplyDeleteis this being self-congratulatory?
have you written something so path breaking that anon's "sense of imagination" may/maynot have reached your imaginative leap?
অসম্ভব ভালো লাগল। আবার মুগ্ধ হলাম।
ReplyDeleteKrishnachura!
ReplyDeletewashing powder nirma.washing powder nirma.
ReplyDeletedoodh si safedi,nirma se aai,
rangeen kapda bhi dhul dhul jaaye.
sabki pasand nirma.
washing powder nirma.
NIRMA.
he he..looks like someone did free publicity for a brand above.Don't you screen the comments before posting?
ReplyDelete@ Anonymous-just-above-this-post:
ReplyDeleteOf course I screen. But that particular jingle used to be my ringtone at some point of time, and I'm particularly fond of it. Hence the biased exception.
Kyablamo :(
ReplyDeleteAbhishek babu'r chhotobela'r proti bhalobasha sarthok bhabe prokash peyechhe ei lekhay. Duto choritroi ki asole Ekjon?
ReplyDeleteKhasha lekha.
tamal thik bolechhe.
ReplyDeletebhalo kintu ektu bishonno.
porte bhalo laaglo.
bhalo laglo
ReplyDeletesmritir sutoy achomka taan porlo...onek din pore phire dekhlam chhele bela ta k....meyeta k ekka dokka khelte dekhoni kokhono?? :)
ReplyDeletekhub khub khub sundor...tobe ekta byapare ektu apotti achhe...amar dharona meyeta motei boro hoye jayni..hotei parena..boro howar agei hariye gechhe nirghat...abar...boro hoye bhirer modhye haranor cheye seta better option bole...:)
ReplyDeleteodbhut akta bhalo laga kaj korche.. na payar modhye o toh akta tripti thekei jaye!
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDelete