BANNER CREDITS: RITUPARNA CHATTERJEE
A woman with the potential to make it big. It is not that she cannot: she simply will not.
PHOTO CREDITS: ANIESHA BRAHMA
The closest anyone has come to being an adopted daughter.

Sunday, August 9, 2015

আইডিয়া

(আমরা কেউ ধর্মে বিশ্বাস করি, কেউ হয়ত ধর্মকে পরিত্যাগ করিনি কিন্তু ধর্ম নিয়ে মাথাও ঘামাই না, কেউ কট্টর নাস্তিক আবার কেউ বা ধর্মনিরপেক্ষ – কিন্তু একটা জায়গায় আমাদের গভীর মিল আছে, আমরা সবাই বাকস্বাধীনতায়  প্রবল ভাবে বিশ্বাসী। আর সেই জন্যই রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়রা যে কথাগুলো বলতে চেয়ে প্রাণ হারালেন সে কথাগুলো যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব, ওনাদের সঙ্গে আমাদের মতাদর্শের মিল আছে কি নেই সেটা এই মুহূর্তে অবান্তর প্রশ্ন। কথাগুলো পৌঁছে দেওয়ার অভিপ্রায়েই সা্রা বিশ্ব জুড়ে একাধিক ব্লগার কীবোর্ড নিয়ে বসেছেন, সেই লেখাগুলো সঙ্কলিত করে দেওয়া হল পাঠকদের জন্য – তালিকাটি দেখা যাবে এই ব্লগপোস্টের শেষে।)




***

“একটা আইডিয়া আছে, স্যার।”
“বলো।”
“কী জানেন তো স্যার, এভাবে হচ্ছে না।”
“কী হচ্ছে না?”
“এইভাবে ব্লগার কুপিয়ে হচ্ছে না স্যার। এভাবে সমস্যার সমাধান হবে না, স্যার।”
“তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে? তুমি জানো, লোকটা কী লিখেছিল? তুমি পড়েছ? তুমি জানো না, ও ধর্মে অবিশ্বাসী, ও নাস্তিক? ও বিধর্মী... তুমি জানো না, বিধর্মীর একমাত্র শাস্তি মৃত্যু?”
“না স্যার, এই নিয়ে চারটে হল তো, জনতা খেপে গেছে।”
“খেপে গেছে মানে?”
“দেখুন স্যার, আমরা তো সামান্য কয়েকটা ব্লগারকেই মেরেছি। কিন্তু সমস্যা হল, মরে গিয়ে এদের নামডাক আরও বেড়েছে। এদের ব্লগগুলো লোকে টপাটপ পড়ে ফেলছে। যারা পড়ছিল না, তারাও পড়ছে।”
“তাতে কী হল?”
“কী বলছেন স্যার? এবার তো আরও লোকে পড়বে। এরা বেঁচে থেকে যাদের মাথা খেতে পারেনি, মরে গিয়ে তাদের মাথায় পোকা নাড়াচ্ছে।”
“অত সহজ নয়। এরপর কেউ এইসব নাস্তিক-টাস্তিক হতে গেলেই দেখবে কী হয়। আমরা বরং এবার থেকে এদের মেরে মাথাগুলো উঁচু কোথাও টাঙিয়ে দিই। বা, এই ধরো, গাছ থেকে ফুল বডি ঝুলিয়ে দিই। তাহলে লোকে বেশি ভয় পাবে।”
“না স্যার, মানুষ খেপে গেছে, আর বাড়াবেন না। এরা একা থাকে, সংসার করে, কাচ্চাবাচ্চা সামলায়, ভয়ডর নিয়ে থাকে, সিনেমা দেখে, বই পড়ে, গানটান শোনে, ক্রিকেট মাঠে গিয়ে চিৎকার করে। কিন্তু ঝামেলা যা করে, ঐ টুকটাক। অর্গানাইজড কিছু নয়। কিন্তু এর ওপর যদি আবার বাড়ান, তাহলে বাওয়াল হতে পারে। দলফল বাঁধলে আমাদেরই সমস্যা। বাস্তিলের মত কিছু একটা করে বসতে পারে।”
“বাস্তিলটা আবার কে?”
“কেউ না, ছাড়ুন ওসব কথা। মোদ্দা কথা, আর ব্লগার মারবেন না স্যার, এরপর সামলানো মুশকিল হবে। অলরেডি ফেসবুকে টুইটারে ঝামেলা হচ্ছে, লোক জড়ো হচ্ছে...”
“এইসব ফেসবুক-টুক বুঝি না। আবার যদি লেখে, আবার মারব।”
“ইজিপ্ট ভুলে গেলেন স্যার?”
“না, মনে আছে। কিন্তু তুমি বলছ, এই লোকগুলোকে ছেড়ে দেব? চারটেকে কুপিয়ে মেরেছি, বাকিগুলোকেও মারব! ধর্ম কাকে বলে জানো?”
“না স্যার, আমার একটা প্ল্যান আছে। অনেক চুপচাপ ব্যাপারটা সারা যাবে, আর কেউ গালাগালও দেবে না।”
“কী চাও, স্পষ্ট করে বলো।”
“দেখুন স্যার, সমস্যা এই নিরক্ষরগুলোকে নিয়ে নয়। এদের আপনি যা বোঝাবেন তাইই বুঝবে। বাওয়াল করবে এই শিক্ষিত মালগুলো। এরা বাইরের খবর পড়ছে, জানছে, শিখছে, তারপর এই ইন্টারনেট এসে হয়েছে আরও ঝামেলা। এই লোকগুলো এখন মিছিল করছে, প্রতিবাদ করছে সোশাল মিডিয়ায়। আমি চাই এদেরকে আমাদের দলে নিয়ে আসতে।”
“কীভাবে?”
“টাকা, স্যার। টাকা ফেলুন।”
“টাকা ফেলতেই পারি। টাকা ফেলেই তো মারালাম মালগুলোকে।”
“না স্যার, এটা অন্য প্ল্যান।”
“কী প্ল্যান?”
“দেখুন স্যার, একশোটা লোকের দশটাও যদি পালটি খেয়ে আমাদের হয়ে লিখতে শুরু করে, তাহলে এই ব্লগারদের আর কিছু থাকবে না। এরপর কুড়ি হবে, তারপর তিরিশ, তারপর পঞ্চাশ। একে একে সব।”
“কিন্তু কিছু ত্যাঁদড়মার্কা পাবলিক থাকে জানো তো? যাদের সামনে টাকা ফেললেও কিছু হয় না। আদর্শ-ফাদর্শের গল্প করে।”
“ওসব নিয়ে ভাবছেন স্যার? আগে টাকা পাঠান। দেশের পভার্টি জানেন তো? ঠিক মেনে নেবে।”
“আর না মানলে?”
“না মানলে ইলেক্ট্রিসিটি, ফোনের লাইন, জলের লাইন, সব কাটতে শুরু করে দিন। এদের বৌ-বাচ্চারাই এদের দিয়ে তখন করিয়ে নেবে। ভাবুন না স্যার, একটা পাড়ায় পাঁচটা বাড়িতে টাকা আসছে, বাচ্চারা ভাল খাচ্ছে, ভাল থাকছে, আর আপনার বাড়িতে কিস্যু নেই, উলটে সব চলে যাচ্ছে। কদ্দিন পারবেন আপনি?”
“কিন্তু এইসব ব্লগার তো বিদেশ থেকেও লিখছে...”
“দেশের পাবলিক যদি পালটি খায় স্যার, বিদেশ থেকে কে কদ্দূর কী করতে পারবে? আপনি সারা পাড়ার কথা শুনবেন, না অ্যামেরিকায় বসে কে ব্লগ লিখছে তার খোঁজ রাখবেন? দেখবেন, পুরো মেন্টালিটি পালটে যাবে, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করবে না। আপনাকে লোকে ভগবান মানবে।”
“হে হে, এসব প্ল্যান তোমার মাথায় কোত্থেকে আসে বলো তো?”
“স্যার, ঐ রোয়াল্ড ডালের একটা গল্প পড়েছিলাম, তার থেকে আইডিয়াটা এসেছে। বাকিটা স্যার, আপনার আশীর্বাদে...”
“কার গল্প?”
“ও ছাড়ুন স্যার। আপনি ওসব নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। আপনি টাকার ব্যবস্থা করুন, বাকি আমি সামলাচ্ছি। আমার দিকটা একটু দেখবেন স্যার।”

***

আজ তিনদিন হল বাড়িতে কারেন্ট নেই, জল নেই। বড় ছেলেটার জ্বর, ডাক্তার আসতে পারবে না জানিয়ে দিয়েছে। ওষুধ নেই, পথ্য নেই, কী হবে জানি না। ড্রয়ারে চেকটা রাখা আছে। বউ হাতেপায়ে ধরছে ওদের কথা শুনতে, টাকাটা নিয়ে নিতে, তাতে অন্ততঃ বাচ্চাগুলো বাঁচবে, খেতে পাবে।

আমাদের শক্তি দাও, ঈশ্বর, যাতে আমরা নিজেদের পরিবারকে না খেয়ে, বিনা চিকিৎসায় মরতে দেখতে পারি।

***

তন্ময় মুখার্জী (বংপেন)
প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
কৌশিক দত্ত
রোহণ কুদ্দুস
আমার মহানবী
তপোব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়
আহত কলম
অমৃতরূপা কাঞ্জিলাল
Know That You Have Won
সৌরাংশু সিংহ
(১৪০) ফিসফাস

Followers