মূল গল্পঃ Trick or Treat
লেখকঃ Judith Garner
অনুবাদ নয়, “অনুসারে” লেখা।
***
সন্ধ্যের পর এদিকটায় ঝপ্ করে অন্ধকার নামে, তাই টর্চটা সঙ্গে রাখেন অরিজিৎ। এমনিতে কমপ্লেক্সটা ভাল, ভয়ডরের কিছু নেই, তবে ঐ – সাপখোপের কথা তো বলা যায় না। আলো একটা সঙ্গে থাকা ভাল।
লেখকঃ Judith Garner
অনুবাদ নয়, “অনুসারে” লেখা।
***
সন্ধ্যের পর এদিকটায় ঝপ্ করে অন্ধকার নামে, তাই টর্চটা সঙ্গে রাখেন অরিজিৎ। এমনিতে কমপ্লেক্সটা ভাল, ভয়ডরের কিছু নেই, তবে ঐ – সাপখোপের কথা তো বলা যায় না। আলো একটা সঙ্গে থাকা ভাল।
চাকরিজীবনে
সন্ধ্যের আগে হাঁটা হয়ে উঠত না অরিজিতের। ঐ, অফিস থেকে ফিরে ডিনারটিনার করে তবে। সেটাই বজায় রেখেছেন।
এখানে এসেছেন
প্রায় বছরতিনেক হল। ছেলে-মেয়ে বাইরে থাকে, তাই রিটায়ার করার পর এইরকম একটা জায়গায় থাকার
সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অরিজিৎ। বাজার – সে বিগ হোক বা স্মল – তো আছেই, তার সঙ্গে জিম,
ক্লাব, লাইব্রেরি, ছোটদের স্কুল, মায় ডাক্তারসমেত একটা ছোটখাট ক্লিনিক।
নাঃ, শহরটাকে লন্ডন না করতে পারলেও ভেতরে একটা ছোট্ট দ্বীপের মত বানিয়ে নিয়েছে বটে! বহির্জগতের সঙ্গে সম্পর্ক না
রাখলেও জীবন কেটে যায় এখানে। আর অবসরপ্রাপ্ত হলে তো কথাই নেই।
*
“দশটা
টাকা দেবেন বাবু?”
কারুর
তো আসার কথা নয় এখানে এইসময়। গা ছমছম করে উঠল অরিজিতের।
বাচ্চা
মেয়ে একটা। কত বয়স হবে? বছর দশেক? হাতে একটা পুতুল, তার গায়ে নীলের ওপর সাদা ছোপ-ছোপ
জামা।
“দশটা
টাকা দেবেন বাবু?”
বিরক্ত
হলেন অরিজিৎ। সিকিওরিটি গার্ডগুলোর কাজ হল হকার বা ভিখিরি ঢুকতে না দেওয়া। নির্ঘাৎ
বুথে বসে ঘুমোচ্ছে।
“দশটা
টাকা দেবেন বাবু?”
“না, টাকা
নিয়ে বেরোই না আমি।”
কথাটা
ডাহা মিথ্যে, কারণ মোবাইল চাবি পার্স ছাড়া কোথাও যান না অরিজিৎ। কিন্তু একদিন দিলে
এরা বারবার আসবে। আর এরপর দলবল নিয়ে এসে জ্বালাতন করবে।
“দিন
না বাবু।”
নাঃ, ভবি
সহজে ভোলবার নয়। পেছন ফিরে ফ্ল্যাটের দিকে হাঁটা লাগালেন অরিজিৎ। কাল সোসাইটির সেক্রেটারির
কাছে একটা কমপ্লেন করতেই হবে।
*
পরের দিনটা
শুয়েবসে কেটে গেল অরিজিতের। খবরের কাগজের বালাই নেই, তবে বইটই পড়েন; আর
নেটফ্লিক্সের নেশাটা ক্রমশঃ সাংঘাতিক হয়ে উঠছে।
সেক্রেটারিকে
জানিয়েছিলেন তিনি। একতলার বাকি পাঁচটা ফ্ল্যাটের মালিকও নাকি মেয়েটাকে দেখেছেন।
সবার কাছেই ঐ এক চাহিদা তার – দশটা টাকা। তবে আর মনে হয় না এইরকম কিছু হবে।
রাত্রে একরকম
জোর করেই হাঁটতে বেরোলেন। বসে থাকলেই বসে থাকা হয়। এরপর বাত, প্রেশার, সব হবে।
আজ মেয়েটা
নেই দেখে বেশ নিশ্চিন্ত হলেন। সেক্রেটারির ধাতানিতে কাজ হয়েছে তাহলে।
টুথপেস্ট
কেনার ছিল। যা হয়, চানাচুর নিমকি আরও রাজ্যের জাঙ্ক ফুড কিনে তবে ফিরলেন অরিজিৎ।
ততক্ষণে মেয়েটার কথা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে।
ফ্ল্যাটের বাইরে চাবি ঘোরাতে গিয়ে জিনিসটা চোখে পড়ল। তেমন কিছু না, দরজার ঠিক পাশে মেঝের ওপর কাপড়ে
মোড়া হালকা রঙের ছোট্টমত কী যেন একটা।
কুড়িয়ে নিয়ে চমকে গেলেন অরিজিৎ।
কুড়িয়ে নিয়ে চমকে গেলেন অরিজিৎ।
এটা
একটা ডান হাত। রক্তমাংসের নয়, প্লাস্টিকের। তবে হাত যে, সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ
নেই। আর এই হাতের জামাটা চেনেন অরিজিৎ, কারণ এতে নীলের ওপর সাদা ছোপ-ছোপ।
হাতটা
কুড়িয়ে নিয়ে ফ্ল্যাটে ফিরে গেলেন অরিজিৎ। ডাস্টবিনে ফেলতে গিয়েও কী ভেবে ফেললেন
না। টেবিলের ওপর রেখে শুয়ে পড়লেন।
*
সকালে সেক্রেটারিকে
উদ্ভ্রান্ত দেখাচ্ছিল। ছ’জন প্রৌঢ় যদি এসে বলেন যে তাঁদের দরজার বাইরে পুতুলের টুকরো
পড়ে আছে, উদ্ভ্রান্ত দেখানোরই কথা।
দু’জনের
দরজার বাইরে দু’টো হাত; অন্য দু’জনের ভাগ্যে দু’টো পা; আর একজনের ধড়, আর শেষজনের মাথা।
অনেক কষ্টে
নানান্ মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে মুক্তি পেলেন সেক্রেটারি। তবে কীভাবে কী করবেন তা আদৌ
বুঝতে পারলেন না তিনি।
এটা ঐ মেয়েটারই কাজ। বাজে রসিকতার একটা সীমা আছে। নির্ঘাত বেড়ার ফাঁকটাক দিয়ে কোনওভাবে ঢোকার
রাস্তা খুঁজে পেয়েছে। পরের মীটিঙে কথাটা তুলতেই হবে।
*
“দশটা
টাকা দেবেন বাবু?”
এটা
একেবারেই আশা করেননি অরিজিৎ। সেদিনের পর এক সপ্তাহ কেটে গেছে। মেয়েটার কথা তিনি ভুলেই
গেছিলেন।
“দশটা
টাকা দেবেন বাবু?”
খেঁকিয়ে
উঠতে গিয়েও থেমে গেলেন অরিজিৎ। হাতের পুতুলটা কোত্থেকে এল? জামাটা তো সেই নীলের
ওপর সাদা ছোপ-ছোপ, কিন্তু...
“দশটা
টাকা দেবেন বাবু?”
হাতে
পুতুলের ডানহাতটা শক্ত করে ধরা। মেয়েটা হাসছে। এ হাসির একটাই মানে হয়।
এবার
হাত ধরে জোরে টান দিল মেয়েটা। আর কোল থেকে চিৎকার করে কেঁদে উঠল পুতুলটা... না না,
পুতুল কোথায়...
পেটমোটা
পার্সটা অজান্তেই হাতে উঠে এল অরিজিতের।