ছোটবেলা থেকেই আসলে দুরারোগ্য ব্যাধি বাসা বেঁধেছিল অমলের শরীরে। দিনের পর দিন দই খেয়ে কমেছিল অনেকটা। তখন তো এত মিষ্টির দোকান ছিল না, তাই অমলের বাড়ির লোকজন পার্সোনাল দইওয়ালা নিযুক্ত করেছিল। পাঁচমুড়া পাহাড়ের কাছ থেকে আসত সেই দইওয়ালা। তার পাড়ায় একজন চণ্ডালিনীর ঝি থাকত।
অমলের কথায় ফিরি। একদম ছোটবেলায় রাজার ডাকহরকরা হতে চাইত অমল। বেশ হাতে লণ্ঠন ঠনঠন করবে, জোনাকি জ্বলবে, আর ও মাভৈঃ বলে দৌড়তে থাকবে। প্রায়ই এই স্বপ্নটা দেখত। জ্বরে ভুগে একদিন রাত্রে অদ্ভুত স্বপ্ন দেখল অমল। সে প্রোমোশন পেয়ে পোস্টমাস্টার হয়েছে। উলাপুর গ্রামে একটা ডাকঘর হয়েছে। সেখানেই বদলি হয়ে এসেছে সে। কাছেই একটা বাচ্চা মেয়ে থাকে।
স্বপ্নটা বেশ জমেছে, এমন সময় হঠাৎ লণ্ঠনের আলোয় অমল দেখতে পেল মেয়েটার মুখটা বদলে মনু মুখোপাধ্যায়ের মুখের মত হয়ে গেল। গম্ভীর গলায় সে বলে উঠল “আমি রতন”। দেখে ঘুম ভেঙে গেল অমলের। স্বপ্নের কুহেলির সমাধান আর হল না। স্বপ্নে বিবিধ রতন দেখার পর থেকেই অবোধ অমল ডাকবিভাগ সংক্রান্ত যাবতীয় অ্যাম্বিশনকে অবহেলা করা শুরু করল।
অসুস্থ অবস্থায় যখন দিনের পর দিন বাড়িতে আটকা পড়ে থাকত, জানালা দিয়ে দেখত আকাশটাকে। তারপর যখন স্কুলে যেতে শুরু করল, তখনও ক্লাসে শব্দরূপ জিজ্ঞেস করলে অবাক হয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকত।
জাম আর জামফলের পাতায় যা অল্প একটু হাসির মতন লেগে থাকে, ক্ষান্তবর্ষণে কাকডাকা বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর হতে চাইত অমল। কিন্তু সেটাও না হওয়ায় অগত্যা কবিতা লিখতে শুরু করে দিল সে।
তারপর ওর জীবনে এল চারুলতা। কিন্তু সুখ সইল না অমলের। ধবল পালে মন্দ মধুর হাওয়া ভালভাবে লাগার আগেই ভূপতিত হল তাদের সম্পর্ক। শুধু যে চারুলতার থেকে দূরে সরে যেতে হল তাইই না, হাতের কাছে একটা প্রেস ছিল, একটা পত্রিকা ছিল, সেগুলো সব গেল। একটা কবিতাও তার আর ছাপা হল না। কবি কবি চেহারা, কাঁধেতে ঝোলানো ব্যাগ সমেত পুরো ইমেজটা জলে গেল।
এগিয়ে চলল অমল। পেছনে পড়ে রইল ছোট নষ্টনীড়। ক্ষতি হয়নি তেমন, কারণ আকাশ তো বড়। আস্তে আস্তে সাত বন্ধুর একটা দল তৈরি হল। কফিহাউসে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে রোজ সাড়ে তিনঘণ্টা চারমিনার খাওয়া ধরল অমল। নিয়ম করে প্রতিদিন আসত সে। রোদ তাকে থামাতে পারত না, কারণ সে নিজেই রোদ্দুর হতে চেয়েছিল। পেছনে ঝরো ঝরো জল ঝরলেও সে ছিল অদম্য। সেখানেও মুশকিল। অমল বিষ্ণু দের কবিতা খুব ভালবাসত, কিন্তু সেই নিয়ে আলোচনা করতে গেলেই কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বাকি সবাই যামিনী রায়ের কথা বলতে থাকত। কিন্তু সেই আড্ডাও টিকল না। মনের দুঃখে ছোটবেলার বন্ধু প্রদোষকে সমস্ত চারমিনার দিয়ে দিল সে। কিন্তু ততদিনে যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গেছে।
দুরন্ত ক্যান্সার ধরা পড়ল অমলের। প্রায়ই হাসপাতালে দিন কাটতে থাকল তার। একদিন বেডে ঘুমিয়ে পড়েছিল। উঠে দেখে, ওর জন্য ফুল রাখা আছে। সঙ্গে কার্ড। খানিকটা হকচকিয়ে গিয়ে কার্ডটা পড়ে দেখল অমল। লেখা আছে, “সুধা তোমাকে ভোলেনি।” সুধা অমলকে না ভুললেও সুধার কথা অমল ভুলতে বসেছিল প্রায়। মুখটা মনেই পড়ল না ভালভাবে। শুধু সুজাতার মুখ ভেসে উঠতে লাগল চোখের সামনে। তাই জীবন শেষ অবধি অমলকে ক্ষমা করল না। ভয়ানক কাশি শুরু হল তার। আস্তে আস্তে শুকিয়ে গেল জীবন। এসব ক্ষেত্রে সাধারণতঃ করুণাধারায় কেউ একটা আসে, কিন্তু করুণা কাশীর মহিষী, আর কাশি আর কাশীর বানান আলাদা, তাই তিনি এলেন না।
অমলের কথায় ফিরি। একদম ছোটবেলায় রাজার ডাকহরকরা হতে চাইত অমল। বেশ হাতে লণ্ঠন ঠনঠন করবে, জোনাকি জ্বলবে, আর ও মাভৈঃ বলে দৌড়তে থাকবে। প্রায়ই এই স্বপ্নটা দেখত। জ্বরে ভুগে একদিন রাত্রে অদ্ভুত স্বপ্ন দেখল অমল। সে প্রোমোশন পেয়ে পোস্টমাস্টার হয়েছে। উলাপুর গ্রামে একটা ডাকঘর হয়েছে। সেখানেই বদলি হয়ে এসেছে সে। কাছেই একটা বাচ্চা মেয়ে থাকে।
স্বপ্নটা বেশ জমেছে, এমন সময় হঠাৎ লণ্ঠনের আলোয় অমল দেখতে পেল মেয়েটার মুখটা বদলে মনু মুখোপাধ্যায়ের মুখের মত হয়ে গেল। গম্ভীর গলায় সে বলে উঠল “আমি রতন”। দেখে ঘুম ভেঙে গেল অমলের। স্বপ্নের কুহেলির সমাধান আর হল না। স্বপ্নে বিবিধ রতন দেখার পর থেকেই অবোধ অমল ডাকবিভাগ সংক্রান্ত যাবতীয় অ্যাম্বিশনকে অবহেলা করা শুরু করল।
অসুস্থ অবস্থায় যখন দিনের পর দিন বাড়িতে আটকা পড়ে থাকত, জানালা দিয়ে দেখত আকাশটাকে। তারপর যখন স্কুলে যেতে শুরু করল, তখনও ক্লাসে শব্দরূপ জিজ্ঞেস করলে অবাক হয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকত।
জাম আর জামফলের পাতায় যা অল্প একটু হাসির মতন লেগে থাকে, ক্ষান্তবর্ষণে কাকডাকা বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর হতে চাইত অমল। কিন্তু সেটাও না হওয়ায় অগত্যা কবিতা লিখতে শুরু করে দিল সে।
তারপর ওর জীবনে এল চারুলতা। কিন্তু সুখ সইল না অমলের। ধবল পালে মন্দ মধুর হাওয়া ভালভাবে লাগার আগেই ভূপতিত হল তাদের সম্পর্ক। শুধু যে চারুলতার থেকে দূরে সরে যেতে হল তাইই না, হাতের কাছে একটা প্রেস ছিল, একটা পত্রিকা ছিল, সেগুলো সব গেল। একটা কবিতাও তার আর ছাপা হল না। কবি কবি চেহারা, কাঁধেতে ঝোলানো ব্যাগ সমেত পুরো ইমেজটা জলে গেল।
এগিয়ে চলল অমল। পেছনে পড়ে রইল ছোট নষ্টনীড়। ক্ষতি হয়নি তেমন, কারণ আকাশ তো বড়। আস্তে আস্তে সাত বন্ধুর একটা দল তৈরি হল। কফিহাউসে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে রোজ সাড়ে তিনঘণ্টা চারমিনার খাওয়া ধরল অমল। নিয়ম করে প্রতিদিন আসত সে। রোদ তাকে থামাতে পারত না, কারণ সে নিজেই রোদ্দুর হতে চেয়েছিল। পেছনে ঝরো ঝরো জল ঝরলেও সে ছিল অদম্য। সেখানেও মুশকিল। অমল বিষ্ণু দের কবিতা খুব ভালবাসত, কিন্তু সেই নিয়ে আলোচনা করতে গেলেই কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বাকি সবাই যামিনী রায়ের কথা বলতে থাকত। কিন্তু সেই আড্ডাও টিকল না। মনের দুঃখে ছোটবেলার বন্ধু প্রদোষকে সমস্ত চারমিনার দিয়ে দিল সে। কিন্তু ততদিনে যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গেছে।
দুরন্ত ক্যান্সার ধরা পড়ল অমলের। প্রায়ই হাসপাতালে দিন কাটতে থাকল তার। একদিন বেডে ঘুমিয়ে পড়েছিল। উঠে দেখে, ওর জন্য ফুল রাখা আছে। সঙ্গে কার্ড। খানিকটা হকচকিয়ে গিয়ে কার্ডটা পড়ে দেখল অমল। লেখা আছে, “সুধা তোমাকে ভোলেনি।” সুধা অমলকে না ভুললেও সুধার কথা অমল ভুলতে বসেছিল প্রায়। মুখটা মনেই পড়ল না ভালভাবে। শুধু সুজাতার মুখ ভেসে উঠতে লাগল চোখের সামনে। তাই জীবন শেষ অবধি অমলকে ক্ষমা করল না। ভয়ানক কাশি শুরু হল তার। আস্তে আস্তে শুকিয়ে গেল জীবন। এসব ক্ষেত্রে সাধারণতঃ করুণাধারায় কেউ একটা আসে, কিন্তু করুণা কাশীর মহিষী, আর কাশি আর কাশীর বানান আলাদা, তাই তিনি এলেন না।