BANNER CREDITS: RITUPARNA CHATTERJEE
A woman with the potential to make it big. It is not that she cannot: she simply will not.
PHOTO CREDITS: ANIESHA BRAHMA
The closest anyone has come to being an adopted daughter.

Monday, December 16, 2019

ধাপে ধাপে


এ জিনিস একদিনে হয়নি। হয়না।

আর পাঁচটা বড় প্রজেক্টের মত এখানেও ওরা প্রথমে সযত্নে একটা ব্লুপ্রিন্ট বানিয়েছে। তারপর পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছে, একদিনে নয়, দুম করে নয়, আস্তে আস্তে, যেমন বড় বড় গবেষণাগারে হয়।

হিংসার মাত্রা, ফ্যাসিজমের মাত্রা একটু একটু করে বাড়িয়েছে ওরা। সঠিক ডোজটা বোঝার দরকার ছিল, তাই না? ক্রমশঃ বুঝেছে যে আমাদের মনুষ্যত্ব বলে কিছু থাকলেও তা ক্ষণস্থায়ী।

কাল রাত্রে নির্বিরোধে গুলি চালিয়ে ছাত্রদের ঘাড়ে উলটে দোষ চাপিয়েছে ওরা। আমরা খুশি হয়েছি পুলিশের এই অপরিসীম বীরত্বে, কারণ ওরা আমাদের মজ্জায় মজ্জায় ঢুকিয়ে দিয়েছে যে সমস্ত দোষ ছাত্রদের।

ঐ যে, বললাম না? একদিনে হয়নি। ধাপে ধাপে হয়েছে।

চ্যানেলগুলোকে এক এক করে ওদের কথায় ওঠবোস করতে দেখে আমাদের রাগ হয়নি। মীম বানিয়ে, শেয়র করে আমরা ভেবেছি আমাদের দায়িত্ব শেষ।

মানবাধিকারবাদীদের বাড়ি থেকে একের পর এক তুলে নিয়ে গেছে ওরা। বলেছে, ওঁরা সন্ত্রাসবাদী। আমরাও বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নিয়েছি। একবারও ভাবিনি, যারা বলছে, তারাই সন্ত্রাসে হাত পাকিয়ে মসনদে বসেছে।

আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে আমাদেরই টাকা যখন নিয়েছে ওরা, আমরা তখনও বুঝিনি, কারণ আমাদের গায়ে আঁচ লাগেনি। কার্ড আছে, নেটব্যাঙ্কিং আছে, আমরা তো আর চুনোপুঁটি ব্যবসায়ী নই যে ক'দিন নগদ টাকা না জুটলে সর্বনাশ হয়ে যাবে! সোশাল মিডিয়ায় ক্যাশলেস ইকোনমির জয়ধ্বজা ওড়ানোর সহজ পন্থা বেছে নিয়েছি আমরা।

ধর্মের নামে ওরা সিনেমার, শিল্পের টুঁটি টিপে ধরার পরেও আমরা নিষ্ক্রিয় থেকেছি। মনে হয়নি, একটা মামলা অন্ততঃ করি।

সিনেমা হলে জনগণমন শুনে উঠে না দাঁড়ানো বাধ্যতামূলক না হওয়া সত্ত্বেও মার খেয়েছি একাধিকবার। গায়ে তো লাগেইনি, বরং যারা মেরেছে তাদের সমর্থনে সোচ্চার হয়েছি।

আস্তে আস্তে পায়ের তলার জমি শক্ত হয়েছে ওদের। একদিনে নয়, একটু একটু করে, ধাপে ধাপে।

তারপর ডোজ বাড়িয়েছে ওরা। সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থন করেছে। খটকা লাগলেও আমরা পাত্তা দিইনি, কারণ প্রমাণ কই?

হ্যাঁ, ওদের অপছন্দের খাবার খেলে মানুষকে যখন পিটিয়ে, কুপিয়ে মেরেছে, তখন খানিকটা শিউরে উঠেছি বৈকি। হাজার হোক, মানুষ তো! তবে ঐ, গোমাতার গায়ে হাত দিয়েছে, মারবে না তো কী করবে? বেশ করেছে!

তারপর যখন ওরা যোগাযোগের সমস্ত মাধ্যম বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে, যখন একটা আস্ত রক্তমাংসের মানুষকে জীপে বেঁধে নিয়ে গেছে, নিরীহ নিরপরাধ মানুষকে মেরে ছবি তুলে, ভিডিও তুলে শেয়র করেছে, আমরা তখনও বলে গেছি, “বেশ হয়েছে, দেশদ্রোহীর উচিত শিক্ষা হয়েছে।

কারণ ততদিনে আমরা শিখে গেছি। আমাদের ট্রেনিং সম্পূর্ণ হয়েছে।

বায়োমেট্রিক ডেটা চেয়েছে যখন, তখনও আমাদের টনক নড়েনি। “ফেসবুককে সব উজাড় করে দিতে পারো, সরকার চাইলেই সমস্যা?” বলে ওদের হয়ে সাফাই গেয়েছি।

ওদের বন্ধুবান্ধব সাঙ্গপাঙ্গর দলে ধর্ষকের সংখ্যা বাড়তে দেখেও কিছু মনে হয়নি আমাদের। আমার বাড়ির কারুর তো কিছু হয়নি, আমার কী?

প্রথম যেদিন স্কুলের পাঠ্যবই, শহরের নাম বদলে ফেলতে শুরু করল, সেদিনও আমাদের কিচ্ছু যায়-আসেনি। দেশের উন্নতির জন্য ভোট দিয়েছি, অমন দু'-একটা হয়েই থাকে, অত পাত্তা দিলে চলেনা।

, বললাম না? একদিনে হয়নি। ধাপে ধাপে আমাদের পোষ মানিয়েছে ওরা।

আমাদের মজ্জায় মজ্জায় ওরা ঢুকিয়ে দিয়েছে যে এটাই সুস্থ, এটাই স্বাভাবিক, এটাই ঠিক।

No comments:

Post a Comment

Followers