জ্যাবোর্যান্ডি এখনও আছে কিনা জানি না, তবে সেটা বলার আগে বলা দরকার মহাকাব্য বা পুরাণ নিয়ে বাংলায় অনেক লেখা আছে, আর তার অনেকগুলোই হাসির। "সুবর্ণগোলক" থেকে "পঞ্চপ্রিয়া পাঞ্চালী" থেকে "বক-বধ পালা" থেকে "লক্ষ্মণের শক্তিশেল" মায় "মহায়ন"...
এগুলোর বৈশিষ্ট্য হল, এখানে কোনও চরিত্রকেই সিরিয়সলি নেওয়া হয়নি। বিজ্ঞাপনই বা বাদ যায় কেন?
"রাবণরাজার টাক ছিল
পরচুলাতে ঢাকছিল,
জ্যাবোর্যান্ডি মেখে মাথায়
চুল এলিয়ে হাসছিল।"
*
আরেকটা ব্যাপার ছিল রথী-মহারথীদের সমাগম। এই ধরুন, শিব্রাম। আজ সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে শিব্রাম থাকলে আর কোনও বাঙালিকে কলকে পেতে হত না।
আর বিজ্ঞাপন – শিব্রাম ট্যাগলাইন লিখবেন না তো কে লিখবেন?
"ঘৃত দুই প্রকার, শ্রী ও বিশ্রী"।
আর ছিলেন বিশপ লেফ্রয় রোডের উনি।
"হাঁটা মানেই বাটা।"
*
জিঙ্গলের প্রসঙ্গে আসি। গানের ব্যাপারে আমি নিতান্তই সা-অক্ষর গোমাংস, তার ওপর বেসুরো বেতালা। গানের কথাও প্রায়ই ভুল শুনি। গলা শুনেও যে খুব চিনতে পারি তা নয়।
ভুলচুক হলে কমেন্টে শুধরে দেবেন, আমিও বদলে দেব।
সবথেকে বিখ্যাতটা দিয়েই শুরু করি।
"শুষ্কতার রুক্ষতার অবসান যদি চান,
বারো মাস সারা অঙ্গে মেখে নিন
সুরভিত অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রীম বোরোলীন।
ত্বক যদি কেটে যায় ফেটে যায়,
(মনে নেই কী) সারা গায়ে মেখে নিন,
সুরভিত অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রীম বোরোলীন।"
এত বছর পরেও কেউ "সুরভিত অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রীম" বললে রিফ্লেক্সে "বোরোলীন" বেরিয়ে যায়। অনেক পরে এটার আরেকটা জিঙ্গল বেরোয়, যেটা আরও বেশি বিখ্যাত হয়।
"জীবনের ওঠাপড়া রোজকার কাটাছড়াতে
যায় হারিয়ে কতকিছু সময়ের সাথে সাথে
কিছু হাসি কিছু কথা যায় থেকে যায় চিরদিন
সুরভিত অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রীম বোরোলীন।"
*
এটা রেডিওর, যদিও একটা আবছা ভিডিও মনে পড়ছে। হয়ত দু'জায়গাতেই হত। কথাগুলো স্পষ্ট মনে আছে, কলেজে অবধি এটা অনেক গাইতাম (কেন গাইতাম কে জানে)।
"মাথার ঘন চুল যখন
মরুভূমি হয়ে যায়
ওয়েসিস নিয়ে আসে মরূদ্যান
মেঘের ছায়ায় ছায়ায়।
ওয়েসিস খুসকি তাড়ায়
ওয়েসিস উকুনও মারে
ওয়েসিস মাথাকে ঠাণ্ডা রাখে
ওয়েসিস ডবল অ্যাকশন হেয়র ভাইটালাইজর, ওয়েসিস।"
শেষ লাইনটা আমি আবার "ফার্টিলাইজার" শুনতাম।
*
এটা টিভির বিজ্ঞাপন। যদ্দূর মনে পড়ছে এটায় কয়েকটা স্টিল ফটোর স্লাইড থাকত, যাতে ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলিকে নানান্ অ্যাঙ্গল থেকে দেখাত।
"মোরা সেই দোকানে চলি, যার নাম ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলি
গড়িয়াহাটার মোড়ের শোভা ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলি।
শাড়ির বাহার দেখতে হলে, হাল ফ্যাশনে চলতে হলে,
একটি নাম সবার কাছে বলি,
সেই নামটি হল ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলি
গড়িয়াহাটার মোড়ের শোভা ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলি।"
*
এটাতেও স্টিল ফটোর স্লাইড। এটা জিঙ্গল নয়। আবৃত্তিও নয়। পাঠ বলা যেতে পারে যদি একই শব্দ একই টোনে তিনবার বলাকে পাঠ ধরা হয়।
"তন্তুজ। তন্তুজ। তন্তুজ।
বাংলার তাঁতের শাড়ি।"
একটা তন্তুশ্রীও ছিল, সেটার বিজ্ঞাপনটা মনে পড়ছে না।
*
উডওয়র্ডস গ্রাইপ ওয়টরের বিজ্ঞাপনটা একটু অদ্ভুত।
ধরা যাক X আর Y দু'জন মানুষ। Xএর বয়স Yএর থেকে বেশি।
একটি শিশু কাঁদে, তাতে Y ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন, আর Xএর সঙ্গে দেখা হয়। এবার একটা সিকোয়েন্স শুরু হয়।
X: কী হল?
Y: খুকু কাঁদছিল।
X: বল উডওয়র্ডস দিতে। তুমি যখন ছোট ছিলে, তোমাকেও খাইয়েছি।
পরের ধাপে X হয়ে যান Y, আর নতুন X দেখা দেন। এই ব্যাপারটা চারবার হয়।
উল্লেখ্য, এটা হিন্দিতেও হত। বাংলা বিজ্ঞাপনটা ডাব করে নয়, আলাদা কাস্ট নিয়ে হয়েছিল।
*
এটা যদ্দূর মনে পড়ছে বৃদ্ধাশ্রমে মেয়ে বাবার সঙ্গে (বা নাতনি ঠাকুরদা/দাদামশাইয়ের সঙ্গে) দেখা করতে এসেছিল।
"টুকরো টুকরো যত স্মৃতি
আঁকা হয়ে যায় এ জীবনে
কিছু সব ছাড়িয়ে, কিছু যায় হারিয়ে
বারেবারে ফিরে আসে মনে
মনে
মনে
খাবারের স্বাদ (ভুলে গেছি)
কুক্মী ডাটা গুঁড়ো মসলা।"
*
কুক্মীর আরেকটা বিজ্ঞাপন হত, সেটা বোধহয় রেডিওর। খুব দ্রুত গাওয়া হত:
"অদ্বিতীয়, সবার প্রিয়
স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়
কুক্মী।"
*
দিগেন বর্মা ভারতে ট্রিভাগোর ডেভেলপমেন্ট হেড, বড়সড় ব্যাপার। ট্রিভাগোর বিজ্ঞাপনে উনিই বলেন "হোটেল? ট্রিভাগো।"
এ ব্যাপারে দিগেন বর্মা কিন্তু পথিকৃৎ নন। তিরিশ বছরেরও বেশি আগে ডক্টর এ সরকার নিজের আর্নিকা প্লাস ট্রায়োফারের বিজ্ঞাপনে নিজেই আবির্ভূত হন।
দুঃখের বিষয়, নামজাদা ডাক্তার হলেও উনি খুব বড় মাপের অভিনেতা ছিলেন না, তাই বিজ্ঞাপনগুলো দেখলেই হাসি পেত।
চুল পেকেছে, অভিনয় আছে আগের মতই, কিন্তু ডাক্তারবাবু এখনও লড়ে যাচ্ছেন। নতুন একটা বিজ্ঞাপন দেখেছি।
*
গেঞ্জি-জাঙ্গিয়া-মোজার অনেক বিজ্ঞাপন হত। আমার ধারণা এই সেক্টরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হত, নয়ত এত বিজ্ঞাপন হত কেন? সবকটা মনে নেই হয়ত, তবে কয়েকটা তো আছেই।
"আদরমাখানো নাম ভারি মিষ্টি, হোসিয়ারি জগতের বিস্ময় রাজু।
রাজু করেছে আলোড়ন সৃষ্টি, রাআআআজু রাজু রাজু।
গেঞ্জি, জাঙিয়া, আর মোজা, সঠিক দামে রাজু স্বস্তি আনে,
রাজু বিশ্বস্ত সবাই জানে, রাআআআআজু, রাজু রাজু।
রাআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআজু।"
*
সবথেকে বিরক্তিকর ছিল এটা, বিশেষতঃ প্রথম দু'টো লাইন। প্রতিটা লাইন অসম্ভব টেনে-টেনে গাওয়া।
"শোওই-শঅবে প্রো-থোওওওম দ্যা-খাআআ পে-লাআআম
কোওই-শোওর কা-লেএএ বোও-ন্ধু হো-লাআআম।"
এরপর হঠাৎই টেম্পো বেড়ে যেত।
"যৌবনে প্রথম পরশ পেলাম।"
আবার আস্তে।
সে যে দিলীঈঈপ, আমাআআর দিলীঈঈপ।"
*
ডিডি গেঞ্জির বিজ্ঞাপনে এক ভদ্রলোকের চোখ বাঁধা থাকত। যদ্দূর মনে পড়ছে তিনি ডার্ট ছুঁড়তেন।
"ডিডি।
ডিডি।
ডিডি।
চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়।"
২০১১ বিধানসভা নির্বাচনের আশেপাশে এই স্লোগানটা বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।
*
এটা আসলে একটা কথোপকথন। চারজন পুরুষ ছিলেন, তাঁদের একজন আবার জিৎ। আর ছিলেন এক মহিলা। প্রথম চারটে লাইন ছিল
- নবাব কিনলে আরাম ফ্রী।
- শুনছি বলছে, দিচ্ছে কি?
- নবাব কিনলে আরাম ফ্রী।
- এবার আরাম পাব ফ্রী।
এবার এঁদের একজন মুখে অসম্ভব তৃপ্তির ছাপ নিয়ে গাইতেন
"আমিও ফ্রীঈঈঈ..."
এরপর এই বিজ্ঞাপনের সবথেকে রহস্যময় ব্যাপার। এক মহিলা এসে খুব শেষজনের কাঁধে চাপড় মেরে সন্দিগ্ধ মুখ করে "তুমিও ফ্রী?" জিজ্ঞেস করেই সম্পূর্ণ অকারণে ভয়ানক নাচতে শুরু করে দিতেন।
"রাবণরাজার টাক ছিল
পরচুলাতে ঢাকছিল,
জ্যাবোর্যান্ডি মেখে মাথায়
চুল এলিয়ে হাসছিল।"
*
আরেকটা ব্যাপার ছিল রথী-মহারথীদের সমাগম। এই ধরুন, শিব্রাম। আজ সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে শিব্রাম থাকলে আর কোনও বাঙালিকে কলকে পেতে হত না।
আর বিজ্ঞাপন – শিব্রাম ট্যাগলাইন লিখবেন না তো কে লিখবেন?
"ঘৃত দুই প্রকার, শ্রী ও বিশ্রী"।
আর ছিলেন বিশপ লেফ্রয় রোডের উনি।
"হাঁটা মানেই বাটা।"
*
জিঙ্গলের প্রসঙ্গে আসি। গানের ব্যাপারে আমি নিতান্তই সা-অক্ষর গোমাংস, তার ওপর বেসুরো বেতালা। গানের কথাও প্রায়ই ভুল শুনি। গলা শুনেও যে খুব চিনতে পারি তা নয়।
ভুলচুক হলে কমেন্টে শুধরে দেবেন, আমিও বদলে দেব।
সবথেকে বিখ্যাতটা দিয়েই শুরু করি।
"শুষ্কতার রুক্ষতার অবসান যদি চান,
বারো মাস সারা অঙ্গে মেখে নিন
সুরভিত অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রীম বোরোলীন।
ত্বক যদি কেটে যায় ফেটে যায়,
(মনে নেই কী) সারা গায়ে মেখে নিন,
সুরভিত অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রীম বোরোলীন।"
এত বছর পরেও কেউ "সুরভিত অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রীম" বললে রিফ্লেক্সে "বোরোলীন" বেরিয়ে যায়। অনেক পরে এটার আরেকটা জিঙ্গল বেরোয়, যেটা আরও বেশি বিখ্যাত হয়।
"জীবনের ওঠাপড়া রোজকার কাটাছড়াতে
যায় হারিয়ে কতকিছু সময়ের সাথে সাথে
কিছু হাসি কিছু কথা যায় থেকে যায় চিরদিন
সুরভিত অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রীম বোরোলীন।"
*
এটা রেডিওর, যদিও একটা আবছা ভিডিও মনে পড়ছে। হয়ত দু'জায়গাতেই হত। কথাগুলো স্পষ্ট মনে আছে, কলেজে অবধি এটা অনেক গাইতাম (কেন গাইতাম কে জানে)।
"মাথার ঘন চুল যখন
মরুভূমি হয়ে যায়
ওয়েসিস নিয়ে আসে মরূদ্যান
মেঘের ছায়ায় ছায়ায়।
ওয়েসিস খুসকি তাড়ায়
ওয়েসিস উকুনও মারে
ওয়েসিস মাথাকে ঠাণ্ডা রাখে
ওয়েসিস ডবল অ্যাকশন হেয়র ভাইটালাইজর, ওয়েসিস।"
শেষ লাইনটা আমি আবার "ফার্টিলাইজার" শুনতাম।
*
এটা টিভির বিজ্ঞাপন। যদ্দূর মনে পড়ছে এটায় কয়েকটা স্টিল ফটোর স্লাইড থাকত, যাতে ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলিকে নানান্ অ্যাঙ্গল থেকে দেখাত।
"মোরা সেই দোকানে চলি, যার নাম ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলি
গড়িয়াহাটার মোড়ের শোভা ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলি।
শাড়ির বাহার দেখতে হলে, হাল ফ্যাশনে চলতে হলে,
একটি নাম সবার কাছে বলি,
সেই নামটি হল ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলি
গড়িয়াহাটার মোড়ের শোভা ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলি।"
*
এটাতেও স্টিল ফটোর স্লাইড। এটা জিঙ্গল নয়। আবৃত্তিও নয়। পাঠ বলা যেতে পারে যদি একই শব্দ একই টোনে তিনবার বলাকে পাঠ ধরা হয়।
"তন্তুজ। তন্তুজ। তন্তুজ।
বাংলার তাঁতের শাড়ি।"
একটা তন্তুশ্রীও ছিল, সেটার বিজ্ঞাপনটা মনে পড়ছে না।
*
উডওয়র্ডস গ্রাইপ ওয়টরের বিজ্ঞাপনটা একটু অদ্ভুত।
ধরা যাক X আর Y দু'জন মানুষ। Xএর বয়স Yএর থেকে বেশি।
একটি শিশু কাঁদে, তাতে Y ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন, আর Xএর সঙ্গে দেখা হয়। এবার একটা সিকোয়েন্স শুরু হয়।
X: কী হল?
Y: খুকু কাঁদছিল।
X: বল উডওয়র্ডস দিতে। তুমি যখন ছোট ছিলে, তোমাকেও খাইয়েছি।
পরের ধাপে X হয়ে যান Y, আর নতুন X দেখা দেন। এই ব্যাপারটা চারবার হয়।
উল্লেখ্য, এটা হিন্দিতেও হত। বাংলা বিজ্ঞাপনটা ডাব করে নয়, আলাদা কাস্ট নিয়ে হয়েছিল।
*
এটা যদ্দূর মনে পড়ছে বৃদ্ধাশ্রমে মেয়ে বাবার সঙ্গে (বা নাতনি ঠাকুরদা/দাদামশাইয়ের সঙ্গে) দেখা করতে এসেছিল।
"টুকরো টুকরো যত স্মৃতি
আঁকা হয়ে যায় এ জীবনে
কিছু সব ছাড়িয়ে, কিছু যায় হারিয়ে
বারেবারে ফিরে আসে মনে
মনে
মনে
খাবারের স্বাদ (ভুলে গেছি)
কুক্মী ডাটা গুঁড়ো মসলা।"
*
কুক্মীর আরেকটা বিজ্ঞাপন হত, সেটা বোধহয় রেডিওর। খুব দ্রুত গাওয়া হত:
"অদ্বিতীয়, সবার প্রিয়
স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়
কুক্মী।"
*
দিগেন বর্মা ভারতে ট্রিভাগোর ডেভেলপমেন্ট হেড, বড়সড় ব্যাপার। ট্রিভাগোর বিজ্ঞাপনে উনিই বলেন "হোটেল? ট্রিভাগো।"
এ ব্যাপারে দিগেন বর্মা কিন্তু পথিকৃৎ নন। তিরিশ বছরেরও বেশি আগে ডক্টর এ সরকার নিজের আর্নিকা প্লাস ট্রায়োফারের বিজ্ঞাপনে নিজেই আবির্ভূত হন।
দুঃখের বিষয়, নামজাদা ডাক্তার হলেও উনি খুব বড় মাপের অভিনেতা ছিলেন না, তাই বিজ্ঞাপনগুলো দেখলেই হাসি পেত।
চুল পেকেছে, অভিনয় আছে আগের মতই, কিন্তু ডাক্তারবাবু এখনও লড়ে যাচ্ছেন। নতুন একটা বিজ্ঞাপন দেখেছি।
*
গেঞ্জি-জাঙ্গিয়া-মোজার অনেক বিজ্ঞাপন হত। আমার ধারণা এই সেক্টরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হত, নয়ত এত বিজ্ঞাপন হত কেন? সবকটা মনে নেই হয়ত, তবে কয়েকটা তো আছেই।
"আদরমাখানো নাম ভারি মিষ্টি, হোসিয়ারি জগতের বিস্ময় রাজু।
রাজু করেছে আলোড়ন সৃষ্টি, রাআআআজু রাজু রাজু।
গেঞ্জি, জাঙিয়া, আর মোজা, সঠিক দামে রাজু স্বস্তি আনে,
রাজু বিশ্বস্ত সবাই জানে, রাআআআআজু, রাজু রাজু।
রাআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআজু।"
*
সবথেকে বিরক্তিকর ছিল এটা, বিশেষতঃ প্রথম দু'টো লাইন। প্রতিটা লাইন অসম্ভব টেনে-টেনে গাওয়া।
"শোওই-শঅবে প্রো-থোওওওম দ্যা-খাআআ পে-লাআআম
কোওই-শোওর কা-লেএএ বোও-ন্ধু হো-লাআআম।"
এরপর হঠাৎই টেম্পো বেড়ে যেত।
"যৌবনে প্রথম পরশ পেলাম।"
আবার আস্তে।
সে যে দিলীঈঈপ, আমাআআর দিলীঈঈপ।"
*
ডিডি গেঞ্জির বিজ্ঞাপনে এক ভদ্রলোকের চোখ বাঁধা থাকত। যদ্দূর মনে পড়ছে তিনি ডার্ট ছুঁড়তেন।
"ডিডি।
ডিডি।
ডিডি।
চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়।"
২০১১ বিধানসভা নির্বাচনের আশেপাশে এই স্লোগানটা বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।
*
এটা আসলে একটা কথোপকথন। চারজন পুরুষ ছিলেন, তাঁদের একজন আবার জিৎ। আর ছিলেন এক মহিলা। প্রথম চারটে লাইন ছিল
- নবাব কিনলে আরাম ফ্রী।
- শুনছি বলছে, দিচ্ছে কি?
- নবাব কিনলে আরাম ফ্রী।
- এবার আরাম পাব ফ্রী।
এবার এঁদের একজন মুখে অসম্ভব তৃপ্তির ছাপ নিয়ে গাইতেন
"আমিও ফ্রীঈঈঈ..."
এরপর এই বিজ্ঞাপনের সবথেকে রহস্যময় ব্যাপার। এক মহিলা এসে খুব শেষজনের কাঁধে চাপড় মেরে সন্দিগ্ধ মুখ করে "তুমিও ফ্রী?" জিজ্ঞেস করেই সম্পূর্ণ অকারণে ভয়ানক নাচতে শুরু করে দিতেন।
*
নবাবের কিন্তু আরেকটা বিজ্ঞাপন ছিল, সম্ভবতঃ রেডিওর।
"হোসিয়ারি জগতে নেই জবাব
গেঞ্জি-জাঙিয়ার নাম নবাব
নবাব গেঞ্জি, নবাব জাঙিয়া,
নবাব নবাব নবাব।"
*
বাপি গেঞ্জি কিন্তু এখনও পাওয়া যায়। ভিআইপি বা পি-থ্রী বা বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর মুখে ছাই দিয়ে কলকাতা রীতিমত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বাপির বিজ্ঞাপনটা বোধহয় অঞ্জন দত্ত গাইতেন, আর বড় বাপি ছিলেন তরুণকুমার।
"ছোট্ট বাপি, চনমনে।
মেজো বাপি, র্যাপ।
বড়বাপিরাশভারিজেনারেশনগ্যাপ (এটা এভাবেই বলা হত)।
খেলাধূলা, স্কুলে যাওয়া, অফিসের বস
বই পড়া, গান শোনা, আরাম অবসর।"
*
পরের বিজ্ঞাপনটার ব্যাপারে বলার আগে মুনমুন সেন সম্পর্কে একটু বলা দরকার। আমার ছোটবেলায় মুনমুন চারটে আইকনিক জিনিসে অভিনয় করেন।
প্রথমটা তপন সিন্হার "বৈদুর্য রহস্য": যতবার দেখি, মন ভাল হয়ে যায়।
দ্বিতীয় "চৌধুরী ফার্মাসিউটিকলস", যাতে সুব্রত মুখোপাধ্যায় (হ্যাঁ, তিনিই) আর মুনমুনের সাঁতারের দৃশ্য বাংলায় আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। এগুলো যে কীভাবে বিশ্বাস করাই আজকালকার বাচ্চাদের...
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রথমদু'টো ভুলতে বসলেও তৃতীয়টা ভুলিনি। ভুলবও না। বাঙালি যতদিন, এটাও ততদিন।
- ম্যাডাম, সামনের সপ্তাহেই প্যারিস পৌঁছে যাব। আপনার কস্টিউম (?) ওখান থেকেই কিনে নেব।
- ভালো কথা। কসকোর হওয়া চাই।
- দেশে-বিদেশে এত ব্র্যান্ড থাকতে কস্কো কেন?
- কারণ (এটা পুরো পীক মুনমুন) কস্কোর ছোঁয়া হল পালকের স্পর্শ।
এই পীক মুনমুন ব্যাপারটা যিনি শোনেন নি এবং দেখেন নি ("বা" নয়, "এবং"), তাঁকে বোঝানো আমার সাধ্যের বাইরে।
পুনশ্চ:
ওপরে একটা "?" আছে। যদ্দূর মনে পড়ছে ওটা কস্টিউম, তবে অন্য কিছুও হতে পারে। বিজ্ঞাপনের চার্ম অবিশ্যি কমছে না তাতে।
*
দু'টো গ্লিসারিন সাবানের বিজ্ঞাপন মনে পড়ছে। রুক্ষ, ত্বক ইত্যাদির জন্য প্রায়ই একটার লিরিক্স অন্যটার ঘাড়ে চাপায় মানুষ। আমি চাপালাম কিনা নিশ্চিত নই।
(এটা আবৃত্তি)
"এল শীতের রুক্ষ শুষ্ক দিন।
প্রিয় ত্বকের যত্ন নিতে চাই চেস্মী গ্লিসেরিন।"
(এটা গান)
"দিনের শেষে রুক্ষ বেশে
ত্বকের লাবণ্য আনে মৌলি,
সে যে মৌলি গ্লিসারিন।"
*
এটা বোধহয় রেডিওর। আমি নিশ্চিত যে এর আগে-পরে আরও লাইন ছিল, সেগুলো ভুলে গেছি। কিন্তু এটা আজীবন চেষ্টা করলেও ভুলতে পারব না। অনেক বিজ্ঞাপনে অনেক ট্যাগলাইন শুনেছি, কিন্তু এর জুড়ি আজও খুঁজে পাইনি।
"ভাঙা সংসার ছাড়া আর প্রায় সবই জুড়ে দেবে দিগ্বিজয়ী ডেনড্রাইট।"
*
একেজি এখনও পাওয়া যায় কিনা জানি না। আমাদের বাড়িতে আসত না, কিন্তু বোধহয় এই বিজ্ঞাপনটা দেখে বায়না করতাম।
"একেজির তৈরি চাটনি আর আচার
একেজির জ্যাম জেলি তার জুড়ী মেলা ভার (ছন্দ কাটছে, তার মানে কিছু একটা ভুলে গেছি)
রান্নাটা জমে যায় সাথে দিলে ভিনিগার
একেজির স্কোয়াশের স্বাদটা জবর
সিরাপ বা সসটা তো আছে দিনভর
স্বাস্থ্য শক্তি একেজির গুণ
স্বাদের জগতে রাজা একেজি কিনুন।"
*
এটা টিভি রেডিও দু'টোতেই হত। এটা মনে আছে শুধু অম্লোজিন নামটার জন্য।
"অম্বল, গ্যাস, বুকজ্বালা?
(সম্পূর্ণ অকারণে ভারি গলায়)
চঅঅশমা মার্কা অম্লোজিন চূর্ণ ব্যবহার করুন।"
*
এটা রেডিওর, এখনও কানে লেগে আছে। দ্বিতীয় লাইনে "চুলকানি" থাকত বলে আমরা এটাকে একটা বয়সে অশ্লীল ভাবতাম।
"স্যালিকল স্যালিকল স্যালিকল মলম।
দাদ হাজা চুলকানিতে দেয় আরাম, স্যালিকল মলম।"
*
রেডিওয় অনেক বিজ্ঞাপন হত, যার বেশিরভাগই তেমন দাগ কাটত না। এটার কথা আলাদা। আমি আমার প্রজন্মের কাউকে চিনি না যে এটা পুরোটা কখনও বলার চেষ্টা করেনি।
এ জিনিস যে শোনেনি তাকে বলে বা লিখে বোঝানো অসম্ভব।
"হ্যাঁ, এই তো!
সময় হয়ে এল!
হ্যাঁ, এই সময়টাই তো!
হাতুড়ি-মার্কা ফিনাইলের
শনিবারের
বারবেলা!
(চ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁ করে দরজা খোলার শব্দ)
শো-নি-বা-রে-এ-এ-এ-এ-র
বা-আ-আ-আ-র-বে-লা-আ-আ।"
*
এটাও রেডিওর (যা বুঝছি আমার ভয়ানক রেডিওর নেশা ছিল)। এটা আশির দশকের মাঝামাঝি হত।
- কী গো নাতনি, আমায় বিয়ে করবে নাকি?
- ইশ্, তুমি বুড়ো!
- অনেক গয়না দেবো।
- ইশ্, তোমার দাঁত পড়ে গেছে!
- ভারত বিস্কুট দেব।
- আমি রাআজি, আমি রাআজি। দাও, ভারত বিস্কুট দাও!
দাদু বলতে মনে পড়ল, রেডিওয় "দাদু খায়, নাতি খায় রবিন্সনস বার্লি" গোছের একটা বিজ্ঞাপন হত, কিন্তু তার আর কিছু মনে নেই।
*
এটা সাধারণ বিজ্ঞাপন হলেও ব্রেনোলিয়ার নামটা দাগ কেটেছিল। কেউ কিছু ভুলে গেলে "ব্রেনোলিয়া খা"-টা ছাত্রমহলে খুব চলত।
- বলতে পারো, কোন্ ভেষজ স্মৃতিশক্তি ও স্বাস্থ্য সতেজ রাখে?
- ব্রাহ্মী!
(ভয়েসওভার)
"আসল ব্রাহ্মীশাকের রস থেকে তৈরি ব্রেনোলিয়া।"
*
এটা একটু লম্বা বিজ্ঞাপন। স্ট্যান্ডে একটা মিনিবাস দাঁড়িয়ে। দু'টো ছেলে সামনের সীটে (দরজার ঠিক পরে যেটা) বসতে গিয়ে দেখত একটা সিগারেটের প্যাকেট আর একটা দেশলাইয়ের বাক্স রাখা।
ওরা বসার খানিক পর এক ভদ্রলোক উঠে সীটটা দাবি করতেন। ছেলেদু'টো বিনা বাক্যব্যয়ে উঠে ঠিক পেছনের সীটে বসত - তবে তার আগে ওঁকে জিজ্ঞেস করত সীটের নিচে রাখা সিগারেট দেশলাই ওঁর কিনা।
- এটা আপনার?
- হ্যাঁ।
- আর এটা?
- এটাও আমার। এগুলোই আমার চিহ্ন ছিল।
তারপর ভদ্রলোক ধোঁয়া ছাড়তে শুরু করতেন, আর (খুব স্বাভাবিকভাবেই) সেই ধোঁয়া উড়ে ছেলেদু'টোর দিকে যেত।
খানিকক্ষণ ইতস্ততঃ করে একটা ছেলে বলত, "এই যে দাদা, শুনছেন? সীটটা আপনার, সিগারেটটা আপনার, দেশলাইটা আপনার, তাহলে ধোঁয়াটাও নিশ্চয়ই আপনার? দয়া করে ধোঁয়াটা আপনার কাছেই রাখুন না!"
*
এটা বোধহয় ডাবড (কারণ গানটা মহিলাকণ্ঠে হলেও কারুর লিপে নয়)। আমি হিন্দিটা শুনেছি, যদ্দূর মনে পড়ছে কাস্টিং একই ছিল।
"ঘুমোও আমার সোনা, আর কেঁদ না, আর দুষ্টুমিও না।"
(ভয়েসওভার)
"দ্বিতীয় শিশুর কথা এখন থাক। কোহিনূরের ওপর ভরসা রাখা যাক।"
*
এটা কারুর মনে আছে কিনা জানি না (আমারও যে খুব স্পষ্টভাবে মনে আছে তা নয়, তাও লিখছি)।
এক ভদ্রলোকের পেছনে অনেক বাচ্চা "বাআবাআ, বাআবাআ" করতে করতে ধেয়ে আসত। ভদ্রলোক খুব বিপর্যস্ত হয়ে পড়তেন।
এবার আরেক ব্যক্তি এসে ভ্যাসেকটমি না করানোর জন্য প্রথমজনকে রীতিমত ভর্ৎসনা করতেন।
অনেকক্ষণ শোনার পর প্রথমজন জিজ্ঞেস করতেন, "আপনার ক'টি সন্তান?"
দ্বিতীয়জন বলতেন, "দু'টি!"
সঙ্গে সঙ্গে টিং টিং করে দু'বার আওয়াজ হত, আর দ্বিতীয় ভদ্রলোকের পাশে আর কাঁখে দু'টো বাচ্চা গজিয়ে যেত। উনি হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতেন।
আর প্রথমজন "এবার আমি কী করব?" বলে হাল ছেড়ে দিয়ে বসে পড়তেন।
*
আরামবাগ হ্যাচারিজ ১৯৭৩এর হলেও এই বিজ্ঞাপনটা বোধহয় নব্বইয়ের দশকের। গলাটা অঞ্জন দত্তর।
"তন্দুরি মোগলাই, কাবাব চিকেন ফ্রাই,
বিলিতি বা খাঁটি দিশি রান্না।
দেখলেই জিভে জল, নো মোর কোলেস্টরল!
আরামবাগের তাজা, মুরগির মজা!"
*
এটা একসময় আমার খুব প্রিয় ছিল, কিন্তু এখন আর পুরো মনে নেই।
"পাখির ডাকে ভোরের অ্যালার্ম (?)
(ভুলে গেছি)
ঘুমভাঙা চোখে আড়মোড়া ভেঙে শুরু হয়ে গেল দিন
আমার সকাল, তোমার সকাল, সবার সকাল শুধু জুড়ে আছে
ব্রিট্যানিয়া থিন।"
*
আমি জীবনে কখনও গরুর খাবার কিনিনি, কিন্তু এটা কোনও কারণে দিব্যি মনে আছে। রেডিওর।
- বালতিটা যে দুধে ভরে গেল ঘোষ মশাই!
- ভরবে না? কপিলা পশু আহার কি এমনি এমনি খাওয়াই?
*
হরলিক্সের একটা খুব প্রিয় বিজ্ঞাপন দিয়ে শেষ করি। এটার কয়েকটা লাইন ভুলে গেছি, মোদ্দা কথা, অনেককে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে কেন তাঁরা হরলিক্স খান। তিনটে লাইন মনে আছে।
শুরুতেই মুনমুন সেন (ওপরে চারটের কথা বলেছিলাম না?এটা চতুর্থটা):
*
এটা রেডিওর, এখনও কানে লেগে আছে। দ্বিতীয় লাইনে "চুলকানি" থাকত বলে আমরা এটাকে একটা বয়সে অশ্লীল ভাবতাম।
"স্যালিকল স্যালিকল স্যালিকল মলম।
দাদ হাজা চুলকানিতে দেয় আরাম, স্যালিকল মলম।"
*
রেডিওয় অনেক বিজ্ঞাপন হত, যার বেশিরভাগই তেমন দাগ কাটত না। এটার কথা আলাদা। আমি আমার প্রজন্মের কাউকে চিনি না যে এটা পুরোটা কখনও বলার চেষ্টা করেনি।
এ জিনিস যে শোনেনি তাকে বলে বা লিখে বোঝানো অসম্ভব।
"হ্যাঁ, এই তো!
সময় হয়ে এল!
হ্যাঁ, এই সময়টাই তো!
হাতুড়ি-মার্কা ফিনাইলের
শনিবারের
বারবেলা!
(চ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁ করে দরজা খোলার শব্দ)
শো-নি-বা-রে-এ-এ-এ-এ-র
বা-আ-আ-আ-র-বে-লা-আ-আ।"
*
এটাও রেডিওর (যা বুঝছি আমার ভয়ানক রেডিওর নেশা ছিল)। এটা আশির দশকের মাঝামাঝি হত।
- কী গো নাতনি, আমায় বিয়ে করবে নাকি?
- ইশ্, তুমি বুড়ো!
- অনেক গয়না দেবো।
- ইশ্, তোমার দাঁত পড়ে গেছে!
- ভারত বিস্কুট দেব।
- আমি রাআজি, আমি রাআজি। দাও, ভারত বিস্কুট দাও!
দাদু বলতে মনে পড়ল, রেডিওয় "দাদু খায়, নাতি খায় রবিন্সনস বার্লি" গোছের একটা বিজ্ঞাপন হত, কিন্তু তার আর কিছু মনে নেই।
*
এটা সাধারণ বিজ্ঞাপন হলেও ব্রেনোলিয়ার নামটা দাগ কেটেছিল। কেউ কিছু ভুলে গেলে "ব্রেনোলিয়া খা"-টা ছাত্রমহলে খুব চলত।
- বলতে পারো, কোন্ ভেষজ স্মৃতিশক্তি ও স্বাস্থ্য সতেজ রাখে?
- ব্রাহ্মী!
(ভয়েসওভার)
"আসল ব্রাহ্মীশাকের রস থেকে তৈরি ব্রেনোলিয়া।"
*
এটা একটু লম্বা বিজ্ঞাপন। স্ট্যান্ডে একটা মিনিবাস দাঁড়িয়ে। দু'টো ছেলে সামনের সীটে (দরজার ঠিক পরে যেটা) বসতে গিয়ে দেখত একটা সিগারেটের প্যাকেট আর একটা দেশলাইয়ের বাক্স রাখা।
ওরা বসার খানিক পর এক ভদ্রলোক উঠে সীটটা দাবি করতেন। ছেলেদু'টো বিনা বাক্যব্যয়ে উঠে ঠিক পেছনের সীটে বসত - তবে তার আগে ওঁকে জিজ্ঞেস করত সীটের নিচে রাখা সিগারেট দেশলাই ওঁর কিনা।
- এটা আপনার?
- হ্যাঁ।
- আর এটা?
- এটাও আমার। এগুলোই আমার চিহ্ন ছিল।
তারপর ভদ্রলোক ধোঁয়া ছাড়তে শুরু করতেন, আর (খুব স্বাভাবিকভাবেই) সেই ধোঁয়া উড়ে ছেলেদু'টোর দিকে যেত।
খানিকক্ষণ ইতস্ততঃ করে একটা ছেলে বলত, "এই যে দাদা, শুনছেন? সীটটা আপনার, সিগারেটটা আপনার, দেশলাইটা আপনার, তাহলে ধোঁয়াটাও নিশ্চয়ই আপনার? দয়া করে ধোঁয়াটা আপনার কাছেই রাখুন না!"
*
এটা বোধহয় ডাবড (কারণ গানটা মহিলাকণ্ঠে হলেও কারুর লিপে নয়)। আমি হিন্দিটা শুনেছি, যদ্দূর মনে পড়ছে কাস্টিং একই ছিল।
"ঘুমোও আমার সোনা, আর কেঁদ না, আর দুষ্টুমিও না।"
(ভয়েসওভার)
"দ্বিতীয় শিশুর কথা এখন থাক। কোহিনূরের ওপর ভরসা রাখা যাক।"
*
এটা কারুর মনে আছে কিনা জানি না (আমারও যে খুব স্পষ্টভাবে মনে আছে তা নয়, তাও লিখছি)।
এক ভদ্রলোকের পেছনে অনেক বাচ্চা "বাআবাআ, বাআবাআ" করতে করতে ধেয়ে আসত। ভদ্রলোক খুব বিপর্যস্ত হয়ে পড়তেন।
এবার আরেক ব্যক্তি এসে ভ্যাসেকটমি না করানোর জন্য প্রথমজনকে রীতিমত ভর্ৎসনা করতেন।
অনেকক্ষণ শোনার পর প্রথমজন জিজ্ঞেস করতেন, "আপনার ক'টি সন্তান?"
দ্বিতীয়জন বলতেন, "দু'টি!"
সঙ্গে সঙ্গে টিং টিং করে দু'বার আওয়াজ হত, আর দ্বিতীয় ভদ্রলোকের পাশে আর কাঁখে দু'টো বাচ্চা গজিয়ে যেত। উনি হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতেন।
আর প্রথমজন "এবার আমি কী করব?" বলে হাল ছেড়ে দিয়ে বসে পড়তেন।
*
আরামবাগ হ্যাচারিজ ১৯৭৩এর হলেও এই বিজ্ঞাপনটা বোধহয় নব্বইয়ের দশকের। গলাটা অঞ্জন দত্তর।
"তন্দুরি মোগলাই, কাবাব চিকেন ফ্রাই,
বিলিতি বা খাঁটি দিশি রান্না।
দেখলেই জিভে জল, নো মোর কোলেস্টরল!
আরামবাগের তাজা, মুরগির মজা!"
*
এটা একসময় আমার খুব প্রিয় ছিল, কিন্তু এখন আর পুরো মনে নেই।
"পাখির ডাকে ভোরের অ্যালার্ম (?)
(ভুলে গেছি)
ঘুমভাঙা চোখে আড়মোড়া ভেঙে শুরু হয়ে গেল দিন
আমার সকাল, তোমার সকাল, সবার সকাল শুধু জুড়ে আছে
ব্রিট্যানিয়া থিন।"
*
আমি জীবনে কখনও গরুর খাবার কিনিনি, কিন্তু এটা কোনও কারণে দিব্যি মনে আছে। রেডিওর।
- বালতিটা যে দুধে ভরে গেল ঘোষ মশাই!
- ভরবে না? কপিলা পশু আহার কি এমনি এমনি খাওয়াই?
*
হরলিক্সের একটা খুব প্রিয় বিজ্ঞাপন দিয়ে শেষ করি। এটার কয়েকটা লাইন ভুলে গেছি, মোদ্দা কথা, অনেককে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে কেন তাঁরা হরলিক্স খান। তিনটে লাইন মনে আছে।
শুরুতেই মুনমুন সেন (ওপরে চারটের কথা বলেছিলাম না?এটা চতুর্থটা):
"আমি কেন হরলিক্স খাই? দাআরুউণ লাগে!"
ঠিক কস্কোর মত আইকনিক নয়, কিন্তু ঐভাবে "দাআরুউণ" বলার ক্ষমতা সারা পৃথিবীতে কারুর ছিল না; হবেও না।
শেষের আগেরজন মধ্যবয়সী ব্যক্তি। বেশ বিরক্তির সঙ্গে বলতেন, "দিনরাত লোডশেডিং, ট্রামেবাসে বাদুড়ঝোলা! আরে বাবা, শরীরটাকে তো রাখতে হবে!"
আর একদম শেষে একটা বাচ্চা, একদম দুগ্ধপোষ্য শিশু, বলবে "আমি তো এমনি এমনিই খাই।"
এই তিনটে লাইনই বেশ মুখে মুখে ঘুরত। বিশেষতঃ শেষটা।
*
উপসংহার:
মুনমুন একজনই।
ঠিক কস্কোর মত আইকনিক নয়, কিন্তু ঐভাবে "দাআরুউণ" বলার ক্ষমতা সারা পৃথিবীতে কারুর ছিল না; হবেও না।
শেষের আগেরজন মধ্যবয়সী ব্যক্তি। বেশ বিরক্তির সঙ্গে বলতেন, "দিনরাত লোডশেডিং, ট্রামেবাসে বাদুড়ঝোলা! আরে বাবা, শরীরটাকে তো রাখতে হবে!"
আর একদম শেষে একটা বাচ্চা, একদম দুগ্ধপোষ্য শিশু, বলবে "আমি তো এমনি এমনিই খাই।"
এই তিনটে লাইনই বেশ মুখে মুখে ঘুরত। বিশেষতঃ শেষটা।
*
উপসংহার:
মুনমুন একজনই।