না, আমার এই লেখার বিষয় "নয়" নয়। এটা সেই অক্ষর, যার ঋ আর এ-র মাঝখানে আসার কথা, যার "হাসিখুশি"র দ্বিতীয় পাতার দ্বিতীয় ফ্রেমে ডিগবাজি খাওয়ার কথা। এই সেই ৯, যার উচ্চারণ "লি", যার ব্যবহার আর নেই। আমার মেয়ে বর্ণপরিচয়ের যে সংস্করণ পড়ে, তাতে ঋ-এর পর সরাসরি এ, আর সেখানে * দিয়ে নিচে লেখা যে এখানে কখনও ৯ নামক অক্ষরের অস্তিত্ব ছিল।
তার মানে ৯ এখন আর ব্যবহার হয় না (তার মানে, ৯খতে, ৯পি, কা৯মা, বা৯শ, শিব৯ঙ্গ, ক্৯ব৯ঙ্গ, আর্দা৯, মজন্তা৯, ৯য়েণ্ডার পেজ, অরুণ জেট৯, মা৯নী ভট্টাচার্য, ব্রুস ৯, ব্রেট ৯, ৯জ্জত পাঁপড় জাতীয় বানান অশুদ্ধ)। কিন্তু ৯ নাকি এককালে ব্যবহার হত। হত হয়ত। আমার বাবা-মাকেও তাইই বলা হয়েছিল, যে ৯ এককালে ব্যবহার হত। আমার দাদামশাইও তাই শিখেছিলেন: আগে ব্যবহার হত। প্রশ্ন হল, কবে ব্যবহার হত? এই যে সবাই বলে, অনেক আগে ৯ ব্যবহার হত, এই অনেক আগে-টা কত আগে?
বঙ্কিমচন্দ্র ব্যবহার করেননি ৯, অন্ততঃ আমার বাড়িতে যে দু'খণ্ডের বঙ্কিমসমগ্র আছে তাতে কোথাও ৯ নেই। মেঘনাদবধ কাব্য বা মাইকেলের অন্যান্য টুকটাক লেখাতেও নেই। হুতোম প্যাঁচার নক্শা পড়ার চেষ্টা করলাম, বেশিদূর এগোতে পারলাম না, কিন্তু যতদূর পড়লাম তাতে ৯-কে পেলাম না (যদিও বেশ অভিনব জিনিস পেলাম - শব্দের দ্বিত্ব হলেই সেখানে ২ ব্যবহার হত, যেমন "সকাল সকাল"-এর বদলে "সকাল ২" ইত্যাদি)। জেদ চেপে গেল, আগাগোড়া কৃত্তিবাসী রামায়ণ পড়লাম, কোথায় সেই ৯? বৈষ্ণবপদাবলীতেও দেখলাম, বিদ্যাপতি আর নানারকম দাসের কেউই ৯ ব্যবহার করেননি। চর্যাপদ পড়ার সাহস দেখাইনি অবশ্য।
ইস্কুলে থাকতে সংস্কৃত পড়েছিলাম। সেখানে তো আরও ঘ্যাম - ঋ আর এ-র মাঝখানে তিন-তিনটে অক্ষর: দীর্ঘ ঋ (লেখার নিয়ম ঋ-এ ঋ-ফলা), ৯ আর, অবিশ্বাস্য হলেও, দীর্ঘ ৯ (লেখার নিয়ম ৯-এর কোলে ছোট আরেকটা ৯)। নানারকম স্বরসন্ধির সূত্রের ফলে দীর্ঘ ঋ আর দীর্ঘ ৯ জন্ম নেয়, আর ৯-এর ব্যবহার আছে।
কিন্তু এ তো গেল সংস্কৃত। বাংলায়? আমি যে বর্ণপরিচয় পড়েছিলাম তার ভূমিকায় বিদ্যাসাগর দিব্যি লিখেছিলেন "বহুকালাবধি বর্ণমালা ষোল স্বর ও চৌত্রিশ ব্যঞ্জন এই পঞ্চাশ অক্ষরে পরিগণিত ছিল। কিন্তু বাঙ্গালা ভাষায় দীর্ঘ ঋ-কার ও দীর্ঘ ৯-কারের প্রয়োজন নাই। এই নিমিত্ত ঐ দুই বর্ণ পরিত্যক্ত হইয়াছে।"
উনি ঘ্যাম লোক, অতএব নিশ্চয়ই ঠিকই লিখেছিলেন। তার মানে দীর্ঘ ঋ আর দীর্ঘ ৯ বাংলায় ব্যবহার হত না। কিন্তু ৯? ৯-এর ব্যাপারে তো উনি সর্বৈব নীরব - তার মানে কি তখন বাংলায় ৯ ব্যবহার হত? কে করত? কি সেই বই? কে লিখেছিলেন / ৯খেছিলেন? কারা পড়ত? কে দেবে এই অদ্ভুত প্রশ্নের উত্তর?
***
পুনশ্চ ১: বাংলা হরফ টাইপ করা নিয়ে ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করছিলাম, দেখলাম বাংলা ইউনিকোডে দিব্যি জ্বল্জ্বল্ করছে ৯, এবং ৯ (সংখ্যা) হিসেবে নয়, রীতিমত আলাদা ইউনিকোড ক্যারেক্টার কোড 098C নিয়ে (৯/নয়-এর ক্যারেক্টার কোড 09EF)। শুধু তাই নয়, ৯-কারও আছে; আর তার সঙ্গে আছে একে একে দীর্ঘ ঋ, দীর্ঘ ৯, দীর্ঘ ঋ-কার আর, হ্যাঁ, সত্যিই, অবিশ্বাস্য হলেও, দীর্ঘ ৯-কার।
সর্বনাশ! কি হবে এবার?
***
পুনশ্চ ২: এরা যতদিন আছে, ৯-এর মৃত্যু নেই।
***
পুনশ্চ ৩: এই তিনজনের ছবি এক লেখায় ব্যবহার করব ভেবেছিলাম কখনও?
***
পুনশ্চ ৪: মনে পড়ল, উপক্রমণিকায় পড়েছিলাম তব + ৯কারঃ = তবল্কারঃ (অ + ৯ = অল্)। তবল্কার মানে কি, বিন্দুবিসর্গও মনে নেই।
"LI" bangle alphabet ta k niyea emon bhabe keu bhabeni.tahole nischoi tule ditona. Ai bangle alphabet ta Chinese der i beshi dorkar chilo. :)
ReplyDeleteDarun ekta bishay nie deergho gabeshanar phashol ei lekhati pore besh laglo..
ReplyDeleteamar dharona Hiuen Tsang jakhon bharote tatha banglay asen takhon ekgada chine lok nie esechilen tara sab "Li". ebar Choinik bhashay "L" er uchharaon khanikta "r" ghesha phole holoki "La" e deerghee die baparta daralo na . "Ra" e derghee dileo eki bapar..china "L" er uchcharon.."La" ar "Ra" er majhamajhi ekta jaygay..eheno abosthay "Li" ke janmo deoa holo..Hiuen babu khushi holen..prothom prothom bangla pondit ra channi..kintu takhonkar birodhi daler niomito anoshan-dharmoghat-abororodh er phole ponditra sesh mesh mene nen..
topic ta osadharon. erokom abhinaba ekta topic tomar matha thekei berote pare... daruun laglo, specially the unique interpretation of Li/Lee wotevr. Ekta parityakto akshar nie ekta chhotokhato research.
ReplyDeleteekta advut banga-li-ana dekhte pelum tomar modhye....
ReplyDeletegood one. really enjoyed reading the post.
ReplyDeleteuff tui parish baba,ato shomoy pash ki kore bolto?
ReplyDeletetor chinta bhaabna-r byapti dekhe amar aaj gorbo bodh hochhe je, tui amar (ba ami tor) bondhu..
ReplyDeleteoshadharon
ReplyDelete