BANNER CREDITS: RITUPARNA CHATTERJEE
A woman with the potential to make it big. It is not that she cannot: she simply will not.
PHOTO CREDITS: ANIESHA BRAHMA
The closest anyone has come to being an adopted daughter.

Monday, September 5, 2011

নুন

(এটা আনন্দবাজারের একটা প্রতিযোগিতার জন্য লেখা। প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী এখানে পাওয়া যাবে। আমি নিশ্চিত যে এই অদ্ভুত লেখা আদৌ ছাপা হবে না, তাই নির্দ্বিধায় এখানে লিখে ফেললাম।)
__________________________________________________________
মুদিখানার হরেন সাহা বলল, "নুন নাই গো, কাল রাতে পলাশদা-রা পুরো বস্তা তুলে নিয়ে গেছে। তবে বলল, আর লাগবে না। কাল এস, পেয়ে যাবে।"

সুরজিৎ বেশ চমকে গেল। আবার? আবার নুন নিয়ে গেছে? কিসে লাগে এত নুন? এই সপ্তাহে ওরা রোজ একবস্তা করে নুন নিয়ে গেছে - কিসের কারবার পলাশকাকুদের?

কেমিস্ট্রির ছাত্র সে। তার সম্যক ধারণা আছে, নুন কী কী কাজে লাগতে পারে। তার একটাও বক্সীগঞ্জে হচ্ছে বলে তো সে শোনেনি। এই গ্রামে ছোটখাট বাদ দিয়ে তেমন বড় কোনো কারখানা নেই; শুধু টুকটাক চাষবাস আর ডিম-মাংস বেচে সংসারগুলো কোনোমতে চলে।

হিন্দু গ্রাম, তাই নির্দ্বিধায় মুরগির সঙ্গে শুয়োরও কাটা হয়। সেই মাংসর বেশিটাই চলে যায় কলকাতায়, বড় বড় সুপারমার্কেটগুলোয়, হোটেলে: সেখানে খানিকটা নুন-ভিনিগার লাগে বৈকি। কলকাতায় থাকতে সে খেয়েওছে।

পলাশকাকুদের নিজস্ব খোঁয়াড় আছে, ঠাণ্ডাঘরও; সেখানে শুয়োর কেটে নুন মাখিয়ে রাখা হয় বৈকি। কিন্তু এখানে তো অত মাংস পাওয়া যায় না।

তাহলে?

নাঃ, ব্যাপারটার খোঁজ নিতেই হচ্ছে। এমনিতেই লোকটা সুবিধের নয়, নানান্‌ শুনেছে ওর নামে। আর কাল থেকে আর লাগবে না মানে যা করার আজ রাতেই করতে হবে।

***

বাবা-মার ঘুমিয়ে পড়ার অপেক্ষা শুধু। পুলিশকে জানাবে ভেবেছিল, কিন্তু কে জানে, ভেতরে কাকে কত টাকা খাইয়ে রেখেছে পলাশকাকুরা? তার থেকে একা যাওয়াই ভালো।

গল্পের গোয়েন্দাদের কাছে কীর'ম বন্দুক-টন্দুক থাকে। ওদের ব্যাপারস্যাপার অনেক ঘ্যাম। যাক্‌গে, একটা টর্চ আর একটা ছাতা নিয়ে সুরজিৎ বেরিয়ে পড়ল। সঙ্গে আরও কয়েকটা প্রয়োজনীয় জিনিস। কাদা, মশা, আরো নানান্‌, কিন্তু সে একেবারেই অদম্য। মা বলেন, "সুখে থাকতে ভূতে কিলোনো।"

পুকুরপাড় দিয়ে যেতে যেতে একবার মনে হল, ওডোমসটা মাখলে হত। কিন্তু থাক্‌, এখন আর এই কারণে ফিরে যাওয়ার মানেই হয় না। যাওয়া যাক্‌।

আজ কীর'ম একটা শুনশান চারদিকে। স্কুলটা কীর'ম ভূতুড়ে বাড়ির মত দাঁড়িয়ে আছে। দোকানপাট সব বন্ধ। এমনিতেই গ্রামেগঞ্জে এগারোটা মানে অনেক রাত, তার ওপর আজ যেন একটু বেশিই নিঝুম। স্কুলের কাছে বেদেদের নতুন আস্তানা থেকে এই ক'দিন আগে অবধিও গল্পগুজব, গানবাজনা, রেডিও, বাচ্চাদর কান্না ভেসে আসত, আজ ক'দিন যাবৎ তারাও সব চুপ। এমনকী দিনের বেলাও তাদের সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না। চলে-টলে গেল নাকি?

শুধু মশা আর ঝিঁঝির ডাক। কী একটা উড়ে গেল মাথার কাছ দিয়ে। চামচিকে? বোধহয়।

***

কারখানার দারোয়ান বসে বসে ঢুলছে। অবিশ্যি বন্দুকের যা ওজন, জেগে থাকলেও বিশেষ সুবিধে করতে পারত বলে মনে হয়না - উঠে দাঁড়িয়ে তাক করে গুলিটুলি করার আগেই মারধর খেয়ে যেত। পা টিপে টিপে সুরজিৎ ঢুকে পড়ল কম্পাউন্ডে।

মূল ঘরের বাইরে একটা জুতোর তাক। তাতে অনেক জুতো। আর একটা ব্যাগ, বড়। টিপেটুপে দেখে বুঝল, জামাকাপড়। স্বাস্থ্যদপ্তর থেকে ইন্সপেক্টর আসতে পারে, তাই হয়ত এই ব্যবস্থা - কারখানায় ঢোকার আগে কর্মচারীদের পরিস্কার জুতো, কাচা জামা পরা। ইন্সপেক্টর চলে গেলেই আবার যে-কে-সেই। হাসিও পায়। নিজেও জুতো খুলেই ঢুকল।

ও গল্পে পড়েছে, মাথার ক্লিপ দিয়ে চোরেরা তালা-ফালা খুলতে পারে। তবে কেমিস্ট্রির ছাত্র সে, জানে কোন্‌ অ্যাসিডে কাজ হয়। খুব সাবধানে পকেট থেকে ভায়াল বের করে ঢালল। প্রাগৈতিহাসিক আমলের কড়া: কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গলে গেল।

খুব সন্তর্পণে ভেতরে ঢুকল। পাশাপাশি দুটো মাংস কাটার গোল করাত, এককোণে রাখা। অন্ধকারেও চকচক করছে। বেশ ধারালো, দেখেই বোঝা যায়। মেঝেতে কাল রাতে কেনা বস্তার মধ্যে অল্প একটু নুন এখনও। আর একটা বড় কালো প্লাস্টিকের প্যাকেট।

ঘরের ঠিক মাঝখানে একটাই ফ্রিজার, তবে বড়। বেশ বড়। আর একদম নতুন। এটায় আর চাবি দেওয়া নেই। সুরজিৎ খুলে দেখল, মাংস। প্রচুর মাংস। নানান্‌ মাপের টুকরো, স্লাইস, সব আলাদা আলাদা বাক্সে ভরা, নুন মাখানো।

এত মাংস আসছে কোত্থেকে? নতুন কোনো খোঁয়াড় ওরা কেনেনি, সুরজিৎ খোঁজ নিয়ে জেনেছে। তাহলে?

ফ্রিজারের দরজা বন্ধ করল সুরজিৎ। সারা ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজল, কিচ্ছু নেই। প্রত্যেকটা তাক উল্টেপাল্টে দেখল, শুধু নানান্‌ কাগজপত্র, ফাইল, অফিস স্টেশনারি, দুয়েকটা খালি জলের বোতল, এককোণে একটা অ্যাকোয়াগার্ড। খুঁটিয়ে দেখল, প্রতিটা জিনিস, প্রতিটা কোণ। একটা কিচ্ছু নেই কোথাও। অবিশ্যি, কী খুঁজছিল, সে বিষয়ে ও নিজেও নিশ্চিত নয়।

ঐ প্লাস্টিকের প্যাকেটটা শুধু দেখা বাকি। ওটা দেখেই বেরিয়ে যাবে। এই মাঝরাতে মশার কামড় খেয়ে শুধু শুধু ফালতু...

টর্চ জ্বেলে দেখল, প্যাকেটটা আসলে কালো নয়। স্বচ্ছ। ভেতরে কালো কী একটা আছে। ভর্তি।

নিচু হয়ে হাত দিয়ে দেখল, নরম। সুতোর মত। ব্যাগভর্তি কালো সুতো? মাংসের প্যাকেট বাঁধার জন্য?

কিন্তু সুতো কি এত নরম হয়? আর এত ছোট ছোট? আর সুতোর তো রীল হয়, এইর'ম গোছা গোছা, চাপ চাপ হয় নাকি?

তাহলে...?

চোখের সামনে কলকাতার সেলুনের মেঝে ভেসে উঠল। সুরজিৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ল বৈদ্যুতিক করাত আর ফ্রিজারের ঠিক মাঝখানটায়।

***

"বলেছিলে যে আর নুন লাগবে না?"

"হরেনদা, আজ এক বস্তা লাগবে না। তবে লাগবে খানিকটা। আর তাড়াতাড়ি দাও, কলকাতা থেকে বড় অর্ডার আছে, এখনই পাঠাতে হবে। সব মাল প্যাক হয়ে গেছে, সামান্য একটু বাকি।"

16 comments:

  1. MUMMAAAAAAAAA! :( :o

    ReplyDelete
  2. বড্ড আনন্দ পেলুম!

    ReplyDelete
  3. The very first thing that came to my mind, after reading this was,

    http://www.imdb.com/title/tt0408236/

    Well written.

    ReplyDelete
  4. onek ta medinipur-nandigram byapar ta bhese utlo!tobe bhalo...tui public demand e likhbi? dhor ekta topic dilam setar upor?

    ReplyDelete
  5. 1. Konkaal kaando (somokaalin)
    2. ekjon swami-r taar stree-k hotya kore,tukro-tukro kore kete, shei tukro-gulo protidin ekta ekta kore edik-odik phele asha(ektu aage-r ghotona)

    - dutoi chokher samne bheshe uthhlo..

    ReplyDelete
  6. eta bakigulor moto oto tao tan tan laglo na..age theke ter pachilam shes ta..:(

    ReplyDelete
  7. ga chhomchhom kora golpo. ki shob golpo re baba! packaged food industry ta shotti besh ye!

    ReplyDelete
  8. Khali mansho mansho....rokto rokto!!!!
    But jeta interesting.....seta holo Panther.. :P

    ReplyDelete
  9. Ki bhoyanok!
    chhottobelar kishor bharati, anandomelar
    kotha mone pore gyalo...thenku!

    ReplyDelete
  10. As usual, darun. Ebong mone hocche chapa hoyeche (antata pratham line ta dekhte pacchi, link dekhi ni), howa to uchit!

    ingit ta ki bededer kete rakha hoyeche? (oi jaygatay
    andaj korechilam ei dike gorabe)

    ReplyDelete
  11. খুব ভালো হয়েছে, ছোট্ট করে গায়ে একবার কাঁটা দিল !

    তবে এতেও 'নকল' এর ব্যাপারটা আছে - "নিচু হয়ে হাত দিয়ে দেখল, নরম। সুতোর মত। ব্যাগভর্তি কালো সুতো? মাংসের প্যাকেট বাঁধার জন্য?" এরপর বাকিটা খুব obvious!

    দশ এ সাড়ে সাত দিলাম ।

    ReplyDelete
  12. amar moto ondho manushder jonyo ektu font sizeta optimum kora jaye? ami porte parchhi na j

    ReplyDelete
  13. সবাইকে ধন্যবাদ। একটা অভিযোগ অনেকেই করেছে, শেষটা হয়ত বোঝা যাচ্ছিল। আশা করব এইর'ম নৈর্ব্যক্তিক, সৎ সমালোচনা ভবিষ্যতেও আসবে।

    সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম ইত্যাদি কোনো ঘটনার সঙ্গে এর কোনোরকম মিল নেই। একেবারেই কাল্পনিক।

    Nivedita, bolechho porte paroni, font size chhoto bole. Possibly XP ba eiro'm kichhu operating system use koro tumi. Ctrl+Scroll Up use kore dekhte paro.
    I suggest you go through this: http://ovshake.blogspot.com/p/blog-page.html

    ReplyDelete
  14. Scary... Super duper scary...

    ReplyDelete

Followers