ব্লগটা তো প্রায় মরতে বসেছে। ভাবলাম একটু
অনুবাদ-টনুবাদ করি, তাতে যদি লাভ হয়। এটা ঠিক অনুবাদ নয়, ঐ, “অনুসারে”।
মূল গল্পঃ The
Immortal Bard
লেখকঃ Isaac Asimov
***
“টাইম ট্র্যাভল সত্যিই সম্ভব? বলেন কী?”
সমস্যাটা আসলে অনেকদিনের। অনসূয়া আচার্য
ফিজিক্স পড়ান, আর প্রিয়ংবদা পালিত পড়ান বাংলা সাহিত্য। বিজ্ঞান আর শিল্পের মধ্যে
কার পাল্লা ভারী তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে সারাক্ষণ খিটিমিটি লেগেই থাকে।
তবে অশান্তি থাকলেও এঁদের পারস্পরিক শ্রদ্ধা
দেখার মত। আসলে নিজের নিজের বিষয়ে দিক্পাল দু’জনেই। লেকচার দিতে অনসূয়ার
প্রায়ই ডাক পড়ে বিশ্বের নানান্ প্রান্তে। নোবেল নিয়েও একটা কানাঘুষো শোনা যায়,
তবে দুর্মুখেরা বলে এটা প্রিয়ংবদাকে তাতানোর জন্য সহকর্মীদের রটানো গুজব। পাত্তা
না দেওয়াই ভাল।
আর প্রিয়ংবদা? বাংলা ভাষায় তাঁর পাণ্ডিত্য
অপরিসীম, তবে তাঁর খ্যাতি কবিতা পড়ানোয়। অসম্ভব সাবলীল তাঁর পড়ানোর ভঙ্গি। যুক্তি
দিয়ে প্রতিটা পঙক্তির অচেনা অজানা মানে এত সুন্দরভাবে বোঝান যে লোকে বলে – ইয়ে – প্রিয়ংবদার
ক্লাসের সময় স্বয়ং অনসূয়া অকারণে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কীসব জানি ভাবেন। গুজব, বলাই
বাহুল্য ।
আজও দু’জনের তর্ক বাধতে চলেছিল, এমন
সময় অনসূয়া তুরুপের তাসটা খেলে দিলেন।
“হ্যাঁ, প্রিয়ংবদা। শুধু সম্ভব নয়, আমি
নিজে এটা করেছি।”
“তাই নাকি?” অবিশ্বাস ঝরে পড়ল প্রিয়ংবদার
গলায়। “প্রমাণ করতে পারবেন?”
“প্রমাণ?” দীর্ঘশ্বাস ফেললেন অনসূয়া। “আগে
বলবেন তো, রেখে দিতাম প্রমাণ। আমি যে শুধু অতীতে গেছি তাইই নয়, মানুষকে নিয়েও এসেছি।”
“আচ্ছা? কাকে কাকে আনলেন, শুনি?”
“কাকে আর আনব? ঐ, আর্যভট্ট, ব্রহ্মগুপ্ত,
চরক, সুশ্রুত। ভাবলাম বিজ্ঞানের অগ্রগতি দেখে ওঁরা উচ্ছ্বসিত হবেন।”
“আচ্ছা? তারপর? আপনার ল্যাবে বসে
চা-বিস্কুট খেলেন বুঝি?”
বিদ্রূপটা গায়ে মাখলেন না অনসূয়া। “সব শুনে
প্রথমে তো ওঁরা অভিভূত। থেকেও গেলেন কিছুদিন আমার বাড়িতে। কিন্তু মানিয়ে নিতে
পারলেন না, জানেন তো। সমাজ অনেক বদলে গেছে।”
অবিবাহিতা অনসূয়াকে খোঁচাটা দিতে গিয়ে
রুচিতে বাধলেও একেবারে ছেড়ে দিলেন না প্রিয়ংবদা: “তারপর ফিরে গেলেন ওঁরা?”
“ফিরে গেলেন মানে – আমিই ফেরত পাঠালাম।
ধরে তো আর রাখতে পারলাম না। মনে হল আরও অল্পবয়সী কাউকে ডাকি।” মুচকি হেসে প্রিয়ংবদার
দিকে তাকালেন অনসূয়া। “আর তখন মনে পড়ল ওঁর কথা।”
“কার কথা?”
“তখনও উনি বিশ্বকবি হননি, জানেন...”
চায়ের কাপটা ভাগ্যিস নামিয়ে রেখেছিলেন
প্রিয়ংবদা, নয়ত বিষম অনিবার্য ছিল। বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইলেন শুধু।
প্রিয়ংবদার অবস্থাটা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ
করলেন অনসূয়া। তারপর শুরু করলেন। “অসম্ভব ফোকাস ছিল, জানেন তো? আমার সঙ্গে কথা বলতে
বলতেও কীসব লিখে ভাঁজ করে পকেটে ভরে ফেললেন। আচ্ছা, প্রকাশকের তাড়া তখনও ছিল?”
“আপনি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ঠাট্টা করছেন?”
“না। সত্যিই এসেছিলেন তো”, মৃদু হেসে
বললেন অনসূয়া। “কত কথা হল ওঁর লেখা নিয়ে... উনি বিশ্বাসই করলেন না এত বছর পরেও ওঁকে
নিয়ে এত মাতামাতি হবে, ওঁর লেখা স্কুলকলেজে পড়ানো হবে, ওঁর গান দু’টো দেশের জাতীয় সঙ্গীত
হবে... ও হ্যাঁ, দাঁড়ান দাঁড়ান, আমার কাছে প্রমাণ আছে যে উনি এসেছিলেন।”
একটা খাতা বের করে পাতা উল্টেপাল্টে প্রিয়ংবদার
সামনের টেবিলে রাখলেন অনসূয়া।
“এটা কী? রবীন্দ্রনাথের একটা সই জাল করিয়ে
আপনি ঠিক কী প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন, অনসূয়া?”
অন্যমনস্কভাবে দেওয়ালের দিকে খানিকক্ষণ
তাকিয়ে রইলেন অনসূয়া। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “উনি ঠিক একই প্রশ্ন করেছিলেন,
জানেন তো। আমি ওঁকে এখনকার বাংলা সিলেবাস দেখালাম, উনি আদৌ বিশ্বাস করলেন না ওটা অথেন্টিক।
তাই প্রমাণ করতে হল।”
“আচ্ছা? কীভাবে প্রমাণ করলেন আপনি?”
“উপায় তো একটাই, তাই না? বললাম আমাদের কলেজে
ভর্তি হয়ে যেতে। অ্যাডমিশন টেস্টে ওঁকে আটকাবে কে? আর মার্কশিট মিলিয়ে দেখার দায়িত্ব তো
আমার ছিল, মনে নেই? হাজার হোক্, ক্লাস এইট, তাই একটু কারসাজি করতে হয়েছিল বৈকি। নামটা বদলাতে হয়েছিল অবশ্য।”
প্রিয়ংবদার মুখ দিয়ে কথাই বেরোল না।
“আর তারপর?”
“ও হ্যাঁ, একটা প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল
বৈকি। দাড়িগোঁফ কামাতে হল, নয়ত ছেলেগুলো লুকঅ্যালাইক কন্টেস্টে নামিয়ে দিত নির্ঘাত।”
“আপনি বলছেন, আমি রবীন্দ্রনাথের ক্লাস
নিয়েছি?” অবিশ্বাস নয়, প্রিয়ংবদার গলায় এখন বিস্ময়।
“হ্যাঁ।”
“তারপর?”
“তারপর আর কী, আপনার যা স্বভাব! আপনার সেমেস্টারে
ক’জন পাশ করে আপনিও জানেন। অত টিপে টিপে নম্বর দিলে ছাত্ররা টিকবে? সব ছেড়েছুড়ে
অন্য সাবজেক্টে চলে যায় বা কলেজ ছেড়ে দেয়। সত্তরজনের ক্লাসেও এবারেও একুশজন গেছে।”
“মানে...”
“হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। রবীন্দ্রনাথের
কবিতার ভাবার্থে উত্তরে আপনি রবীন্দ্রনাথকেই শূন্য দিয়েছিলেন। উনি ফিরে এসে শুধু
বলেছিলেন, ‘এত কিছু ভেবে লিখিনি, জানেন তো...?’”
darun hoyeche. Sotyi bolte ki onek bangla kobita-r byakha school e pore amar o ei ek i kotha mone hoyeche.
ReplyDelete