আগেই বলে রাখি, এই পোস্টে কয়েকটা ছবি আছে। আমার ছবি আঁকার
হাত জঘন্য। স্কেল মিলবে না।
*
উপেন লোকটা কয়েকদিন ধরেই বেশ ভাবাচ্ছে। পুরো ব্যাপারটা লিখে
রাখা ভাল।
উপেনের জমির মাপ ছিল দু’বিঘে। বিঘে বলতে ঠিক কতটা বোঝায় তা
নিয়ে আমার একটা ভাসা-ভাসা ধারণা ছিল। সার্চ করতে গিয়ে দেখলাম ভারতবর্ষের আলাদা
আলাদা রাজ্যে আলাদা আলাদা মাপ।
পশ্চিমবঙ্গে এক বিঘে মানে ১,৩৩৩ বর্গমিটার। বাংলাদেশে
১,৩৩৭.৮ বর্গমিটার। দু’টোর গড় ১৩৩৫.৪ বর্গমিটার। সেটা ধরেই এগোই।
অর্থাৎ দু’বিঘে মানে ২,৬৭০.৮ বর্গমিটার। বর্গাকৃতি (চৌকো)
হলে তার একেকটা দিক ৫১.৬৮ মিটার গোছের। এটা খুব একটা বড় নয়। সাধারণ সুইমিং পুলের একটা দিক পঞ্চাশ মিটার
হয়। মনে রাখতে হবে, এর মধ্যে বাড়ি আমগাছ সব ছিল। প্রাচীরটা ছিল কিনা নিশ্চিত নই।
তবে উপেনদের অবস্থা এককালে এর থেকে ভাল ছিল। ঋণে বাদবাকি সব
জমি খুইয়ে না বসলে কত জমি ছিল বলা শক্ত। এ ব্যাপারে ইতিহাস নীরবই থেকেছে।
কিন্তু এ লেখার মূল বিষয় উপেনের পারিবারিক ইতিহাস নয়। এ লেখা ঐ জমি নিয়ে।
প্রসঙ্গতঃ, উপেন লোকটা বিশেষ সুবিধের নয়। ফিরে এসে জমির সঙ্গে বাজে ব্লেমগেম
খেলেছিল। মিথ্যে ডকুমেন্ট বানিয়ে জমি কেড়ে নেওয়ায় কষ্ট হওয়াটা স্বাভাবিক।
কিন্তু তার আউটবার্স্ট জমির ওপর হওয়া অনুচিত।
পুরো ব্যাপারটা এইর’ম। জমি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পর “লিখি দিল
বিশ্বনিখিল দু বিঘার পরিবর্তে” বলেটলে উপেন বেরিয়ে পড়েছিল।
সে পড়েছিল বেশ করেছিল, কিন্তু পনেরো-ষোলো বছর পর ফিরে এসে খুব
অস্বস্তিকর রকমের প্যাসিভ অ্যাগ্রেসিভ কথা বলতে শুরু করেছিল:
“ধনীর আদরে গরব
না ধরে! এতই হয়েছ ভিন্ন
কোনোখানে লেশ নাহি অবশেষ সেদিনের কোনো চিহ্ন!”
উপেন ঠিক কী আশা করেছিল কে জানে। হয়ত ভেবেছিল বাগানের মধ্যে দু’বিঘে
জমি থাকবে, কিন্তু প্রচুর আদরযত্ন করা সত্ত্বেও তাতে ফলফুল কিস্যু ধরবে না।
প্রসঙ্গতঃ, সেই বাগানের আম নিতে উপেন আদৌ দ্বিধাবোধ করেনি। কোনও
কারণে উপেনের ধারণা হয়েছিল যে বাগান হাতছাড়া হলেও গাছের আম নিজেরই থাকে, কাজেই প্রণামটনাম করে খাওয়ার প্ল্যান করছিল। ধরা পড়ে যাওয়ার পর অবশ্য উপেনের এই অধিকারবোধ চলে যায়। তখন আম ভিক্ষে চাওয়ার চেষ্টা করে।
তবে এসব সত্ত্বেও বলতে বাধ্য হচ্ছি, আম নেওয়ার জন্য গ্রেপ্তার করা, মেরে খুন করার হুমকি দেওয়া ইত্যাদি একটু বাড়াবাড়ি।
*
এখানে আরেকটা ব্যাপার আছে। বাড়ি পৌঁছনোর সময়ই উপেন তৃষাতুর ছিল (গরমকালে রাস্তায় জল খায়নি কেন? গ্রামে স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল ছিল না?)। তারপর আম নিয়ে পুরো শুনানিটা হয় জলের ধারে। তখন উপেনের তেষ্টা হয়ত আরও বেড়ে গেছিল।
তবে এসব সত্ত্বেও বলতে বাধ্য হচ্ছি, আম নেওয়ার জন্য গ্রেপ্তার করা, মেরে খুন করার হুমকি দেওয়া ইত্যাদি একটু বাড়াবাড়ি।
*
এখানে আরেকটা ব্যাপার আছে। বাড়ি পৌঁছনোর সময়ই উপেন তৃষাতুর ছিল (গরমকালে রাস্তায় জল খায়নি কেন? গ্রামে স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল ছিল না?)। তারপর আম নিয়ে পুরো শুনানিটা হয় জলের ধারে। তখন উপেনের তেষ্টা হয়ত আরও বেড়ে গেছিল।
*
এ তো গেল উপেনের অস্বাভাবিক পোজেসিভনেসের কথা। এবার জমির
কথায় আসি।
যাঁর বাগানের আকারজনিত ওসিডি নিয়ে এই কবিতা, উপেন
তাঁকে চারবার “বাবু” আর দু’বার “রাজা” বলেছে (আলাদা আলাদাভাবে; “রাজাবাবু” বলেনি কখনও)। একবার “মহারাজ”ও বলেছে। “রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন
চুরি” বাদ দিলাম। জমিদারকে রাজা বলাটা হয়ত স্বাভাবিক, কিন্তু উপেন লোকটা বড্ড ইনকন্সিস্টেন্ট। আমি এখানে “বাবু”
বলছি।
আগেই বলছি, জমির মাপ আনুমানিক ৫০ মিটার x ৫০ মিটার,
তবে সেটা বর্গাকার হলে তবেই।
কিন্তু বর্গাকার হওয়া কি সম্ভব?
কবিতার মূল বিষয় হল বাবুর বাগানের (বাবুবাগান নয়; সেটা
ঢাকুরিয়ায়) আকৃতি। দৈর্ঘ্য আর প্রস্থ মিলছিল না। উপেনের জমি বর্গাকৃতি হলে কিন্তু ব্যাপারটা
অদ্ভুত হত। যেমন ধরা যাক, এইটা।
এখানে দু’টোই বর্গাকার। কিন্তু বাবুর
সমস্যার সঙ্গে (“প্রস্থে ও দিঘে সমান হইবে টানা”) মিলছে না। আর কী হতে পারত? দেখা যাক।
এটা হওয়ার সম্ভাবনা কম। বাবুর যা বাতিক, ঐ L-শেপড
জমিটুকু হয়ত নিতেনই না। আর না নিলে উপেন হয়ত ঐটুকু জায়গায় থেকে যেতেই পারত।
এ এক অবাস্তব ব্যাপার। মাটি খুঁড়ে বেরোতে হত উপেনকে। এটা হলে এমনিই
বেচে দিত, সপ্তপুরুষ অর আদারওয়াইজ।
যা দাঁড়াল, জমি বর্গাকৃতি ছিল না। তার মানে
আয়তাকার। গোল নয় এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত, কারণ চৌকো বাগানের ভেতর গোল জমি, সেটা বেচা নিয়ে ঝামেলা – এসবের সম্ভাবনা খুব কম। একেবারে নেই বলব না, কিন্তু সে ছবি আঁকা
আমার সাধ্যের বাইরে।
ব্যাপারটা খুব সম্ভবতঃ নিচের ছবিটার মত ছিল।
ব্যাপারটা খুব সম্ভবতঃ নিচের ছবিটার মত ছিল।
আগেই বলেছি, মোট জমির মাপ ২,৬৭০.৮ বর্গমিটার। এবার তার প্রস্থ একটা ভদ্রস্থ কিছু ছিল নির্ঘাত। ফিতের মত ২,৬৭০ মিটার x ১ মিটার ছিল না বলেই মনে হয়। এক মিটার প্রস্থে বাড়ি বানানো অসম্ভব না হলেও হাঁটাচলা করতে গেলে উপেনকে দ্বিমাত্রিক হতে হত।
জমি ঠিক কতটা চওড়া ছিল বলা শক্ত। সুমনের কথা মাথায় রেখে দশফুট
ধরি? দশফুট মানে তিন মিটার।
একটা প্রাচীরও ছিল, তবে সেটা বোধহয় বাবুর বাগানের প্রাচীর,
জমির নয়। এই প্রাচীরটা একটু রহস্যময়: যে-সে ঢুকে যেকোনও গাছের নিচে বসে পড়তে পারত, কিন্তু ফল
পড়লে কুড়োনোর অধিকার পেত না।
আমসমেত গাছের ডাল প্রাচীরের বাইরে ঝুঁকে পড়তেই পারত। সেটা হলে কী হত কে জানে।
আমসমেত গাছের ডাল প্রাচীরের বাইরে ঝুঁকে পড়তেই পারত। সেটা হলে কী হত কে জানে।
তিন মিটার প্রস্থ ধরলে দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৮৯০ মিটার। মন্দ নয়।
কিন্তু এখানে একটা সমস্যা আছে। আমগাছ নেহাৎ রোগাপাতলা গাছ
নয়। উইকিপিডিয়া বলছে ক্রাউন রেডিয়স (শাখাপ্রশাখা সব মিলিয়ে) ব্যাসার্ধ দশ মিটার।
তার মানে পুরো ব্যাপারটা কুড়ি মিটার চওড়া। যদি ধরেও নিই ডালপালা সীমানার বাইরে
ঝুলত, তাহলেও কমে কত হবে? পনেরো মিটার?
পনেরো মিটার হলে কিন্তু দৈর্ঘ্য ঝপ করে নেমে আসবে ১৭৮
মিটারে। আমার এক কিলোমিটার হাঁটতে মোটামুটি মিনিটদশেক লাগে, অতএব এটুকু হাঁটতে
লাগবে পৌনে দু’মিনিট। জ্যৈষ্ঠমাসে অতি ভোরে উঠে তাড়াতাড়ি ছুটলে আরও অনেক কম লাগত
উপেনের।
তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াল? জমি চওড়ায় একটা আমগাছের সমান,
লম্বায় ১৭৮ মিটার।
আমরা একটা দিক একেবারে “এক আমগাছ” (খুব কমিয়ে ১৫ মিটার) ধরলে
দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ১৭৮ মিটার। সেক্ষেত্রে উপেনের জমি বাদ দিলে বাবুর বাগানের মাপ হত
১৭৮ মিটার x ১৬৩ মিটার।
এখানে অনেকগুলো হিসেব অ্যাপ্রক্সিমেট। যেমন ১৭৮x১৬৩-টা আসলে ১৭৮.০৫৩x১৬৩.০৫৩।
উপেনের জমি
|
বাবুর বাগান
(উপেনের জমি বাদ দিয়ে)
|
বাবুর বাগান
(উপেনের জমি সমেত)
|
|||||||||
দৈর্ঘ্য
|
প্রস্থ
|
মাপ
|
মাপ
(বিঘে)
|
দৈর্ঘ্য
|
প্রস্থ
|
মাপ
|
মাপ
(বিঘে)
|
দৈর্ঘ্য
|
প্রস্থ
|
মাপ
|
মাপ
(বিঘে)
|
১৭৮
|
১৫
|
২৬৭১
|
২
|
১৭৮
|
১৬৩
|
২৯০৩২
|
২২
|
১৭৮
|
১৭৮
|
৩১৭০৩
|
২৪
|
১৩৪
|
২০
|
২৬৭১
|
২
|
১৩৪
|
১১৪
|
১৫১৬২
|
১১
|
১৩৪
|
১৩৪
|
১৭৮৩৩
|
১৩
|
১০৭
|
২৫
|
২৬৭১
|
২
|
১০৭
|
৮২
|
৮৭৪২
|
৭
|
১০৭
|
১০৭
|
১১৪১৩
|
৯
|
৮৯
|
৩০
|
২৬৭১
|
২
|
৮৯
|
৫৯
|
৫২৫৫
|
৪
|
৮৯
|
৮৯
|
৭৯২৬
|
৬
|
আমার ব্যক্তিগত ধারণা প্রথমটাই, কারণ বাবুর জমি মনে হয় বেশ
বড় ছিল বলেই মনে হয়। অবিশ্যি এইর’ম ভাবার কোনও কারণ নেই। হয়ত মাত্র চারবিঘে জমি নিয়েই উনি আরও দু’বিঘে জুড়ে দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সমান করতে চাইছিলেন।
*
এই ভিডিওটার সঙ্গে এই পোস্টটার কোনও সম্পর্ক নেই। এমনিই রাখলাম।
*
এই ভিডিওটার সঙ্গে এই পোস্টটার কোনও সম্পর্ক নেই। এমনিই রাখলাম।
ভাবনায় অভিনবত্ব আছে। চিন্তা নিসন্দেহে যুক্তিসঙ্গত। রবি ঠাকুর সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দিয়ে যে বিপ্লবী বিপ্লবী ন্যারেটিভ তৈরী করার চেষ্টা করেছেন টা একেবারে কাপড় হারা হলো যে। সাব্বাস।
ReplyDelete