BANNER CREDITS: RITUPARNA CHATTERJEE
A woman with the potential to make it big. It is not that she cannot: she simply will not.
PHOTO CREDITS: ANIESHA BRAHMA
The closest anyone has come to being an adopted daughter.

Thursday, December 26, 2019

বক্সিং ডের রূপকথা

গল্পটা ১৯৫৩র বক্সিং ডের।

ডিক ব্রিটেন্ডেন লিখেছিলেন, “নিউজিল্যান্ডের প্রত্যেক সন্তান যেন মায়ের কাছে দেশের এ বীরগাথা শুনে বড় হয়।”

সেযুগের তো বটেই, ব্রিটেন্ডেন সম্ভবতঃ নিউজিল্যান্ডের সর্বকালীন সেরা ক্রিকেটলেখক।

অথচ য়োহ্যানেসবার্গে নিউজিল্যান্ড হেরেছিল ১৩২ রানে।

কী এমন ঘটেছিল সেদিন এলিস পার্কে?

*

যে সাতটা দেশ তখন টেস্ট ক্রিকেট খেলত, তাদের মধ্যে নিউজিল্যান্ড ছিল সবথেকে দুর্বল। দু’দশকের বেশি সময় ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেললে কী হবে, তখনও অবধি একটাও টেস্ট জেতেনি তারা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দলের হাল ধরেন ওয়ল্টর হ্যাডলী। তখন চাকা খানিকটা ঘুরতে শুরু করে। তারপর বার্ট সাটক্লিফ, মার্ভ ওয়লেসের হাত ঘুরে দায়িত্ব আসে জিওফ রাবোনের হাতে।

খুব বড় মাপের ক্রিকেটার ছিলেন না রাবোন, কিন্তু তাঁর কথা একটু না বললেই নয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে র‍্যাফে নাম লিখিয়েছিলেন এই রাবোন। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে শুধু নিজে বাঁচেননি, নিজের গোটা দলকে বাঁচিয়েছিলেন, তাও একাধিকবার।

১৯৪৪এ, বিশ্বযুদ্ধের একদম শেষ পর্যায়ে রাবোনের বোমারু বিমানে আগুন লেগে যাওয়া সত্ত্বেও বেঁচে যান তিনি। প্যারাশুট নিয়ে নামেন ফ্রান্সের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। সেখানে এক ফরাসী পরিবারের আশ্রয়ে বেঁচে যান।

আর এই সাহস, আত্মবিশ্বাস, স্নায়ুর ওপর নিয়ন্ত্রণ, সমস্ত সংক্রামিত হয়েছিল তাঁর দলের মধ্যে।

ষাটের দশকে বিশ্বের অন্যতম ক্রিকেটশক্তি হয়ে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ গল্প তার দশ বছরেরও বেশি আগের, কিন্তু তাদের উত্থানের সূচনা এই সময়েই।

এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ধীরে ধীরে, সযত্নে গড়ে তুলছিলেন জ্যাক চীথম। গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ ড্র করে নিউজিল্যান্ডে জিতেছিল তারা। নিজের দেশে স্বভাবতঃই তাদের দাপট অনেক বেশি হওয়ার কথা।

আর হলও তাই। ডারবানে শতরান করলেন রয় ম্যাকলীন, জ্যাকি ম্যাকগ্লিউ করলেন ৮৪, আর ম্যাচে ন’উইকেট নিলেন হিউ টেফীল্ড। রাবোনের লড়াকু ব্যাটিং সত্ত্বেও ইনিংসে হারল নিউজিল্যান্ড।

য়োহ্যানেসবার্গ টেস্টের ব্যাপারে লেখার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং আক্রমণের ব্যাপারে একটু বলা উচিত। নতুন বলে বিপজ্জনক ছিলেন ডেভিড আয়রনসাইড; ঘণ্টার পর ঘণ্টা একনাগাড়ে বল করেও ক্লান্ত হতেন না অ্যান্টন মারে; আর টেফীল্ড ছিলেন সম্ভবতঃ দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে সেরা স্পিনার।

ডারবানে এঁদের সঙ্গে যোগ দিলেন নীল অ্যাডকক, সম্ভবতঃ সে’যুগের দ্রুততম বোলার। দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে প্রথম বিশ্বমানের ফাস্ট বোলারও তিনিই। বয়স মাত্র বাইশ, আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে, গতি কমানোর প্রশ্নই নেই। তার ওপর বিপজ্জনক বাউন্স।

আর এলিস পার্কের পিচও তো তেমন! সবুজ ঘাস, বল শুধু লাফায় তাই নয়, পিচে পড়ার পর আসে অসম্ভব গতিতে।

এই পিচেই প্রথম দিন আট উইকেটে ২৫৯ করল দক্ষিণ আফ্রিকা। তার মধ্যে ৯৩ করলেন রাসেল এন্ডীন, আর ক্লাইভ ফান রাইনেভেল্ড করলেন ৬৫। টনি ম্যাকগিবন শেষবেলায় পরপর দু’উইকেট না পেলে আরেকটু বেশি হত হয়ত।

*

ওয়েলিংটন থেকে অকল্যান্ডে যাওয়ার পথে যখন টাঙ্গিওয়াই পেরোল ট্রেনটা, রাত তখন দশটা পেরিয়ে গেছে। সামনে এবার ওয়াঙ্গাহু নদীর ব্রিজ।

দুর্ভাগ্যবশতঃ, সেদিনই যে এই ব্রিজের একটা খিলান ভেঙে পড়েছিল, তা ট্রেনের কর্মচারী বা দু’শো চুরাশি জন যাত্রীর কেউই জানতেন না।

চেষ্টা একটা হয়েছিল বৈকি। ব্রিজের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন জনৈক সিরিল এলিস। ট্রেন আসছে দেখে টর্চ জ্বেলে সতর্ক করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। এমার্জেন্সি ব্রেক চাপেন ড্রাইভার চার্লস পার্কার। “স্যান্ডিং” করে গতি আরও কমিয়ে দেন ফায়রম্যান লান্স রেডম্যান।

কিছু মানুষ বাঁচলেন এর ফলে। কিন্তু এঞ্জিন, টেন্ডার, আর দ্বিতীয় শ্রেণীর পাঁচটা কামরা সমেত শেষ অবধি ওয়াঙ্গাহুতে আছড়ে পড়ল ট্রেন।

টাঙ্গিওয়াইয়ে রাত তখন দশটা একুশ। য়োহ্যানেসবার্গে দুপুর বারোটা একুশ।

নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে এতবড় ট্রেন দুর্ঘটনা আর কখনও হয়নি। মোট একশো একান্নজন মারা যান। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন বব ব্লেয়রের বাগ্‌দত্তা নেরিসা লাভ।

দুর্ঘটনার সময় এলিস পার্কে ফীল্ডিং করছিলেন একুশ বছরের ব্লেয়র। বেশ ভাল বলও করেন সেদিন। আর ফিরেই পান খবরটা।

*

পরের দিন বড়দিন। খেলার বিরতি। কিন্তু উৎসবের লেশমাত্র ছিল না নিউজিল্যান্ড শিবিরে। সবার মন তখন টাঙ্গিওয়াইয়ের দিকে। রেডিও, খবরের কাগজ, যে যেভাবে হোক যতটা সম্ভব জানার চেষ্টা করে চলেছে তখন।

তারপরের দিন খানিকটা সামলে উঠে মাঠের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন ক্রিকেটাররা। দলের সঙ্গে গেলেন না শুধু ব্লেয়র। হোটেলের ঘরে তাঁর সঙ্গী বলতে তখন শুধু রেডিও আর ম্যানেজার জন কার। তিনি যে সেদিন আসবেন না, তা মাইকে শুনতে পেল এলিস পার্কের সবাই।

২৭১ রানে শেষ হল দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।

*

নিউজিল্যান্ডের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান সাটক্লিফ। অনেক বছর পর তিনি নির্দ্বিধায় জানান যে এলিস পার্কের এই টেস্টের মত এত দ্রুতগতির পিচ তিনি প্রায় দেখেননি বললেই চলে।

এলিস পার্কের পিচে মিডিয়ম পেসারের বাউন্সারই আসে বেশ জোরে, আর এ তো অ্যাডকক!

তবে এদিন বাউন্সার দেওয়ার চেষ্টাও তেমন করেননি সাড়ে ছ’ফুটের অ্যাডকক। নিজের উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে লেংথ থেকেই বল বাউন্স করাতে সক্ষম হলেন। শুরুতেই চোট পেলেন রাবোন, তারপর আয়রনসাইডের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন।

এবার অ্যাডককের পালা। ব্যাটটা কোনওমতে খানিকটা তুলতে পারলেন মারে চ্যাপ্‌ল্‌। বল তাঁর গ্লাভ ছুঁয়ে প্রথমে লাগল বুকে, তারপর উইকেটে।

ম্যাট পূরের সঙ্গে এবার যোগ দিতে এলেন স্বয়ং সাটক্লিফ। অ্যাডককের দু’টো বল খেলে দিলেন তিনি।

তৃতীয় বল বাউন্সার। স্বভাবতঃই হুক করতে গেলেন সাটক্লিফ।

সাটক্লিফের কানের পাশ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখে স্ট্রেচার হাতে দৌড়ে এল ফার্স্ট-এডের দল, তাঁদের পুরোভাগে সদ্য আউট হওয়া রাবোন। ততক্ষণে সাটক্লিফকে ঘিরে ধরেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ফীল্ডাররা।

কোনওমতে উঠে দাঁড়ালেন সাটক্লিফ। হেঁটেই বেরোলেন মাঠ থেকে। যাওয়ার আগে চীথমের সঙ্গে হাত মেলাতেও ভুললেন না।

প্যাভিলিয়নে ফেরামাত্রই কিন্তু তাঁকে নিয়ে ছুটতে হল হাসপাতালে। এই চোটের মানসিক ধাক্কা জীবনের শেষ অধ্যায়েও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি সাটক্লিফ।

*

এদিকে অ্যাডককের আক্রমণে জর্জরিত হয়েও পঁচিশ মিনিট মাটি কামড়ে পড়ে রইলেন জন রীড। তিন রানের মাথায় সেই অ্যাডককের বলেই ফিরলেন তিনি।

এরপর লরি মিলারের পালা। কোনও রান করার আগেই অ্যাডককের বল আছড়ে পড়ল তাঁর বুকে। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল কাশি, আর কাশির সঙ্গে রক্ত। স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে নিয়েও ছুটতে হল হাসপাতালে।

অ্যাডককের বল বুকে লেগে উইকেটে লাগায় আউট হলেন পূর, অনেকটা চ্যাপ্‌লেরই মত। নিউজিল্যান্ডের স্কোর তখন মাত্র ৩৫। দলের এগারোজনের চারজন প্যাভিলিয়নে, দু’জন হাসপাতালে, একজন হোটেলে। তখন দেড়শো রানে ফলোঅনের যুগ, অতএব দরকার আরও ৮৬।

খানিকটা লড়লেন জন বেক আর ফ্র্যাঙ্ক মূনি। তারপর অ্যাডককের বলে চোট পেলেন বেক, বল লাগল কুঁচকির ঠিক পাশে। এযাত্রা বেঁচে গেলেও আঘাতের জেরে উলটে গেল বেকের “বক্স”। ছুটে এলেন ম্যাকগ্লিউ, বেকের ব্যাটের হাতল দিয়ে কোনওমতে ঠুকে ঠুকে মেরামত করলেন।

নতুন বলটা কোনওমতে খেলে দিলেন বেক আর মূনি। কিন্তু তাতে হবে কী? মারে আর টেফীল্ডের বলে রান করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার! শেষ অবধি বাইশ করে আউট হলেন বেক।

সবাইকে চমকে দিয়ে প্যাভিলিয়নের সিঁড়ি দিয়ে তখন নেমে এলেন মিলার। হাততালিতে ফেটে পড়ল তেইশ হাজার দর্শক।

*

কাশির দমকে দমকে রক্ত বেরোনোর পর ডাক্তাররা মিলারকে মাঠে যেতে বারণ করেছিলেন। বুকে আরেকবার লাগলে মৃত্যুও হতে পারে, বলেছিলেন তাঁরা।

পাত্তা দেননি মিলার। একরকম জোর করেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন।

এবার রুখে দাঁড়ালেন তিনি। রান করলেন মাত্র চোদ্দ, কিন্তু জুটিতে চব্বিশ রান ওঠার ফলে ফলোঅন বাঁচানোর লক্ষ্যে আরেকটু এগিয়ে দিলেন নিউজিল্যান্ড।

কিন্তু দরকার যে আরও চল্লিশ! মূনি আছেন বটে, কিন্তু ব্যাটসম্যান বলতে বাকি যে শুধু দুই টেল-এন্ডার ম্যাকগিবন আর গাই ওভার্টন।

কে বাঁচাবে নিউজিল্যান্ডকে?

*

বাঁ কানের পেছনে অনেকটা ফুলে গেছিল সাটক্লিফের। “ফোলাটার মাপ আমার হাতের মুঠোর সমান,” পরে বলেছলেন নিউজিল্যান্ডের দ্বাদশ ব্যক্তি এরিক ডেম্পস্টার।

তবে হাড় ভাঙেনি, তাই কানের লতিতে সেলাই করে ছেড়ে দিতে চাইলেন ডাক্তার। তবে ঐ, ছাড়ার আগে আরেকবার কানের ফোলা জায়গাটা আঙুল দিয়ে টিপে ধরতে গেলেন।

আর তাতেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন সাটক্লিফ।

এ পরিস্থিতিতে ব্যাট করতে নামার প্রশ্নই ওঠে না, তাও আবার এলিস পার্কে অ্যাডককের সামনে।

কিন্তু সাটক্লিফকে বোঝাবে কে? যেটুকু দ্বিধা ছিল, জ্ঞান ফেরার পর গলায় খানিকটা স্কচ ঢালতেই সেটুকুও কেটে গেল।

প্যাভিলিয়নে সাটক্লিফকে থামানোর একটা শেষ চেষ্টা করেছিলেন বটে রাবোন। চটজলদি জবাব এল: “স্কোরটা দেখেছ?”

ব্যান্ডেজের ওপর ব্যান্ডেজ, স্তরের পর স্তর। কান দিয়ে রক্ত বেরিয়েই চলেছে। ব্যান্ডেজের ওপর ক্রমশঃ ফুটে উঠছে লাল ছোপ।

ক্রীজে বেশি সময় কাটানোর প্রশ্নই ওঠে না। চল্লিশ রান করা নিয়ে তো কথা!

সাতান্ন রানের জুটি গড়লেন মূনি আর সাটক্লিফ। প্রথম পঞ্চাশ রান এল ঊনচল্লিশ মিনিটে। দু’টো ক্যাচ পড়ল সাটক্লিফের। চারটে ছয় মারলেন তিনি। তারপর আউট হলেন মূনি। টিকলেন না ম্যাকগিবন আর ওভার্টনও।

ন’উইকেট পড়ে গেছে, ব্লেয়র ব্যাট করবেন না, কিন্তু আসল কাজ হয়ে গেছে। ব্যবধান কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র একশো সতেরো।

পাঁচ উইকেট নিয়েছেন আয়রনসাইড। মাঠ ছেড়ে বেরোচ্ছেন, স্বভাবতঃই উঠে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানাল গোটা স্টেডিয়ম।

কিন্তু রূপকথার আরেকটা অধ্যায় যে তখনও বাকি!

*

রেডিওয় সব শুনে ইতিমধ্যেই কারকে ট্যাক্সি ডাকতে বলে দিয়েছেন ব্লেয়র। প্যাভিলিয়নে ঢুকেই প্যাড পরতে শুরু করে দিলেন। ততক্ষণে সাটক্লিফের তাণ্ডব শুরু হয়ে গেছে।

ক্রীজে পৌঁছনোর পথে ব্লেয়রের কান্না প্রথম চোখে পড়ে স্কোয়্যারলেগে দাঁড়িয়ে থাকা ম্যাকলীনের। হাততালি থেমে গেছে অনেকক্ষণ।

প্যাভিলিয়নের কাঁচের জানালার সামনে এসে দাঁড়িয়ে তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছে নিউজিল্যান্ডের গোটা দল। চোখের জল লুকোনোর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করছেন না কেউ।

এগিয়ে এলেন সাটক্লিফ। হাত রাখলেন ব্লেয়রের কাঁধে।

“এখানে বেশিক্ষণ থাকার কোনও মানে হয় না, বলো? হাত খুলে মারতে শুরু করি বরং। কী আর হবে? বড়জোর আউট হব।”

*

ওভার শেষ। বল করতে এলেন টেফীল্ড।

প্রথম চার বলে তিনটে ছয় মারলেন সাটক্লিফ। ফেটে পড়ল গোটা মাঠ, বিশেষতঃ লংঅনের পেছনে বসে থাকা দর্শকরা।

এখানে একটা কথা বলা দরকার। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্য তখন তুঙ্গে। সারা মাঠে ছোট্ট একটা অংশে বসার অনুমতি ছিল অশ্বেতাঙ্গদের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যারা খেলত, এরা সাধারণতঃ তাদেরই সমর্থন করত।

মৃত্যুভয় অগ্রাহ্য করে মাথা ব্যান্ডেজে ঢেকে নেমে যদি বিপক্ষের ব্যাটসম্যান চার বলে তিনটে ছয় মারায় কী হয়েছিল, বলাই বাহুল্য।

একটা রান নিলেন সাটক্লিফ। চোয়াল শক্ত করে হাতটা চোখের ওপর একবার বুলিয়ে নিলেন ব্লেয়র।

এই ছয়টা গেল মিডউইকেটের ওপর দিয়ে।

এর আগে টেস্ট ক্রিকেটে কখনও এক ওভারে পঁচিশ রান ওঠেনি। তাও আবার টেফীল্ডের ওভারে! আট বলের ওভার, তবে পরের দু’বলে রান না হওয়া সত্ত্বেও রেকর্ড বজায় থাকল বৈকি!

সাতচল্লিশ বছর অক্ষত ছিল সাটক্লিফের রেকর্ড।

টেফীল্ড কে সেটা এখন একটু জানা দরকার। টেস্টে ওভারপিছু তিনি রান দিয়েছিলেন দু’য়েরও কম। ইংল্যান্ডের সঙ্গে একবার টানা ১৩৭ বলে কোনও রান দেননি টেফীল্ড। শুধু টেস্ট নয়, প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেও এটা বিশ্বরেকর্ড।

তবে ঐ ছ’রানের মাথায়ই স্টাম্পড হলেন ব্লেয়র, টেফীল্ডের পরের ওভারে। ছেষট্টি বলে তিপ্পান্ন রান দিলেন টেফীল্ড: টেস্ট ক্রিকেটে এত মার তিনি আর কখনও খাননি।

চারটে চার, সাতটা ছয় মেরে ১১২ মিনিটে আশি করে অপরাজিত রইলেন সাটক্লিফ। ব্লেয়রের সঙ্গে জুটিতে উঠল তেত্রিশ রান – মাত্র দশ মিনিটে।

পরস্পরের কাঁধে হাত রেখে যখন মাঠ থেকে বেরোচ্ছেন সাটক্লিফ আর ব্লেয়র, মাঠে তখন কান পাতা দায়।

রূপকথা ছাড়া আবার কী?

*

তারপর? ও হ্যাঁ, খেলার কী হল বলা দরকার বোধহয়। রীড আর ম্যাকগিবনের সামনে ৬৭ রানে ছ’উইকেট হারিয়ে বসলেও শেষ অবধি ১৪৮ তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা।

দু’শো বত্রিশ করতে হত নিউজিল্যান্ডকে। তৃতীয় দিনের শেষে তিন উইকেট হারিয়ে ৬৮ তোলে তারা। পরের দিন সকালে অবশ্য মাত্র ১০০ রানেই ফুরিয়ে যায় তাদের ইনিংস।

No comments:

Post a Comment

Followers