ণত্ব-বিধান নিয়ে নানান্ বাতেলা এইখানে।
***
অনেকদিন আগে যখন ণত্ব-বিধান নিয়ে লিখেছিলাম, খুব ইচ্ছে ছিল ষত্ব-বিধান নিয়ে লেখার, কিন্তু নানান্ কারণে হয়ে ওঠেনি। খানিকটা হয়ত দরকার পড়েনি বলেই। ণ্-ন্-এর ভুলটা যতটা কমন, শ্-ষ্-স্-এর ব্যাপারটা কোনও কারণে ঠিক অতটা নয়।
ষ্-এর গল্পটা বলি। ণ্-এর মতই এর উচ্চারণ হয় জিভ মূর্ধায় ঠেকিয়ে। মূর্ধা ব্যাপারটা বোঝা খুব সোজা — ট্ উচ্চারণ করার সময় জিভ যেখানে ঠেকে। এক্কেবারে জলবৎ তরলং, কিন্তু আমরা আদৌ ব্যাপারটা মেনে চলি না। উচ্চারণের সময় শ্ আর ষ্-এর পার্থক্য করি না।
প্রসঙ্গতঃ বলে রাখা ভাল, বাংলায় S-er উচ্চারণ নেই, সবকিছুই SH; বিদেশী শব্দে S থাকলে অবিশ্যি বলতে হয়, আর সেক্ষেত্রে লেখার সময় স্ লেখা বাধ্যতামূলক। যেখানে SH, সেখানে শ্ (বা কখনও স্, যেমন "সাহেব") ব্যবহার হয়।
বিদেশী শব্দে কখনও ষ্ ব্যবহার হয় না।
উদাহরণ -
সুট আর শু পরে শোফারের সিটে বসলে নিজেকে সুলতান মনে হয় না।
***
এবার ষ্-এর প্রসঙ্গে আসি। আজকে বাংলা ভাষা যেখানে পৌঁছেছে, ষ্-এর প্রয়োজনীয়তা প্রায় নেইই। সংস্কৃতে ষ্-এর ব্যবহার ছিল, আর তার চেহারাও ছিল তার মাসতুতো ভাই ণ্-এর মত।
ष আর ण-কে একইরকম দেখতে না?
কিন্তু বাংলায় ষ্-এর অবস্থা বড়ই করুণ। বোঝার ওপর শাকের আঁটির মত অপরেশনের দাগের মত ঐ মাঝের ইয়েটা রয়ে গেছে। একে তো লোকে মোদ্ধেন্ন ষ্ বলত, ঐ দাগের ফলে তার নাম হয়েছে পেটকাটা মোধেন্ন ষ্। আজ অবধি কাউকে শুনলাম না ল্যাজবিশিষ্ট হ বলতে, শুধু ষ-এর বেলাতেই যত ইয়ে।
[ষ্-এর দুঃখ যদি কেউ বুঝে থাকেন তবে তিনি শিব্রাম। প্রতিশোধের জ্বালায় তিনি "শুঁড়ওয়ালা বাবা" লেখেন। সে গল্প যে পড়েনি তার নরকবাস অনিবার্য।]
শুধু তাইই নয়, ক্ আর ষ্ জুড়ে যে ক্ষ্ হয়, তারও নাম কয়ে-মোদ্ধেন্ন-ষয়ে খিঁও।
***
যাক্গে, ষ্-এর কথায় ফিরি। একই শব্দে দুই ন অতটা বিরল নয়, কিন্তু তিনটে শ পাওয়া বেশ শক্ত। এই মুহূর্তে "সবিশেষ" ছাড়া কিস্যু মনে পড়ছে না (কামসূত্রে "সুশোষণ" জাতীয় কিছু আছে কিনা আমার জানা নেই)। সে যাক্গে, এবার ষত্ব-বিধানের প্রসঙ্গে আসি।
ষত্ব-বিধানের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম -
শ্ কখনও ষ্-এ পরিণত হয় না। শুধুমাত্র স্ থেকে ষ্ হয়। ণত্ব-বিধান যেমন ণ্-ন্-এর যুদ্ধ নিয়ে, ষত্ব-বিধান তেমনই ষ্ বনাম স্। শ্ এখানে ফালতু।
১) ঋ-এর পর এক্কেবারে চোখ-কান বুজে ষ্, যেমন ঋষি, বৃষ্টি। তালব্য শ্ নিয়ে এসব ঝামেলা নেই, তাই কৃশ, দৃশ্য।
উদাহরণ -
বৃষ্টিস্নাত কৃশ বৃষকে দেখে ঋষির ক্ষুধার উদ্রেক হল।
২) অ আ ছাড়া অন্যান্য স্বরবর্ণের পর যদি কোনও প্রত্যয়ের মধ্যে স্ থাকে, আর সেই প্রত্যয়ের মধ্যে ক্ খ্ গ্ ঘ্ য্ র্ ল্ ব্ থাকে তাহলে সেই স্ ষ্ হয়। যেমন ভবিষ্যৎ, প্রতীক্ষা, পরিষ্কার (কিন্তু পুরস্কার)। শ্-এর ক্ষেত্রে এসব নিয়ম খাটে না, যেমন বেশ্যা, বিশ্বামিত্র, ইত্যাদি।
উদাহরণ -
বিশ্বামিত্রের ক্ষুধার্ত প্রতীক্ষার পুরস্কার দিতে গিয়ে মেনকা মুমূর্ষু হয়ে পড়লেন।
৩) অতি, অভি, সু, অনু, নি, বি উপসর্গের পর ষ্ হয়, যেমন অতিষ্ঠ, অভিষেক, সুষুপ্তি, অনুষ্ঠান, নিষাদ, বিষাদ। কিন্তু শ্ এক্সেম্পটেড, যেমন অতিশয়, অভিশাপ, সুশীল।
উদাহরণ -
অভিষেক অতিশয় সুশীল ব্যক্তি, কিন্তু সে সুষুপ্তিতে নিমজ্জিত হলেই সুশ্রী নারীবৃন্দ তাকে অতিষ্ঠ করার চেষ্টা করে।
৪) নির্ বা দুর্ উপসর্গের পর ক্ খ্ প্ ফ্ থাকলে ষ্ হয়, যেমন দুষ্কর, নিষ্প্রাণ। না থাকলে স্, যেমন দুঃস্থ, নিঃস্ব। শ্-এর এসব ঝামেলা নেই, যেমন নিঃশেষ, দুঃশলা।
উদাহরণ -
জয়দ্রথের পকেট মারা দুষ্কর, তাই দুঃশলা তাঁর নেটব্যাঙ্কিংএর পাসওয়র্ড ক্র্যাক করে তাঁকে নিঃস্ব করে দিলেন।
৫) আবির্ (আবীর বা আবির নয়, শেষে হসন্ত আছে), চতুর্ (এখানেও হসন্ত, চাতুরির কোনও গল্প নেই) ইত্যাদির পর ক্ খ্ প্ ফ্ থাকলে ষ্ হয়, যেমন আবিষ্কার, চতুষ্কোণ।
উদাহরণ -
চতুষ্কোণ আবিষ্কার করে বৈজ্ঞানিক "ইউরেকা" বলতে চাইলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ তিনি গ্রীক জানতেন না।
৬) কিছু শব্দে এমনিই ষ্ হয়, কোনও কারণ ছাড়াই - যেমন বিষয়, ষোড়শ, আষাঢ়, পাষাণ, যুধিষ্ঠির।
উদাহরণ -
নিষাদষোড়শীর আষাঢ়ে গল্প শুনে যুধিষ্ঠির তার দিকে পাষাণ ছুঁড়ে মারলেন।
***
এ তো গেল ষ্-এর গল্প - কিন্তু স্-ই বা কম যায় কীসে? তারও নিজস্ব আইন আছে বৈকি!
১) সাৎ-প্রত্যয়ান্ত শব্দের স্ কখনওই ষ্ হয় না, যেমন অকস্মাৎ, ভূমিসাৎ।
উদাহরণ -
বাথটাব থেকে অকস্মাৎ লাফিয়ে উঠতে গিয়ে আর্কিমিডিস পা পিছলে ভূমিসাৎ হলেন।
২) আগে অঃ বা আঃ আর পরে ক্ খ্ প্ ফ্ থাকলে তার ঠিক পরের ষ্ স্-এ পরিণত হয়, যেমন পুরস্কার (কিন্তু পরিষ্কার), পরস্পর, ভাস্কর, অস্ফূট। সন্ধি না হলেও হয়, যেমন স্বতঃস্ফূর্ত।
উদাহরণ -
ভাস্করাচার্য আর আর্যভট্ট স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরস্পরকে পেটাতে লাগলেন।
২ক) ২এর মতই, শুধু পরে ত্ থাকলেও স্ হতে পারে, যেমন মনস্তাপ বা শিরস্ত্রাণ।
উদাহরণ -
ভাস্করাচার্য শিরস্ত্রাণ পরেননি বলে অনেক পরে আর্যভট্টের মনস্তাপ হল।
৩) আগেই বলেছি, বিদেশী শব্দে ষ্ হয় না, স্ বা শ্ হয়।
উদাহরণ -
সেল্স্ম্যানটা শেল্ডনসাহেবকে "শেষের কবিতা" বা সেঁকো বিষ কোনওটাই বেচতে না পেরে ষাঁড়ের মত চিৎকার করতে লাগল।
Fardeen khan nei. E lekha ashompoorno.
ReplyDeleteSigh. You are right, perhaps.
DeleteSe apni jai bolun, beral e je sho lage ta to talobyo sho. Tar swokitotai ami mugdho.
ReplyDeleteতার স্বকীয়তায় আমরা সবাই মুগ্ধ। :)
Deleteহঠাৎ কেন জানি না প্রচন্ড বাথরুম পেয়ে গেল
ReplyDeleteস্স্স্স্... কিন্তু "প্রচন্ড" কেন? "প্রচণ্ড" তো!
Deleteণ্ড কি করে লিখতে হয় বুঝতে পারছি না।
Deleteণ্ + ড্
Delete"আজ অবধি কাউকে শুনলাম না ল্যাজবিশিষ্ট হ বলতে, শুধু ষ-এর বেলাতেই যত ইয়ে।
ReplyDelete[ষ্-এর দুঃখ যদি কেউ বুঝে থাকেন তবে তিনি শিব্রাম। প্রতিশোধের জ্বালায় তিনি "শুঁড়ওয়ালা বাবা" লেখেন। সে গল্প যে পড়েনি তার নরকবাস অনিবার্য।]
শুধু তাইই নয়, ক্ আর ষ্ জুড়ে যে ক্ষ্ হয়, তারও নাম কয়ে-মোদ্ধেন্ন-ষয়ে খিঁও।"
এই বিদঘুটে কয়ে-মোদ্ধেন্নো-ষোয়ে-খিঁও টা নিয়ে আমার confusion এর অন্ত নেই। এটা এরকম কেন?
আর ল্যাজবিশিষ্ট হ টা পড়ে খুব হেসেছি। প্লাস লাস্ট সেন্টেন্স টা জাস্ট ঘ্যাম।
ধন্যবাদ, ধন্যবাদ।
Deleteতালব্য শ তে র /ৃ অ্যাড করলে s উচ্চারণ হয়।
ReplyDeleteনা। ওটা ভুল উচ্চারণ। Sridevi নয়; Shridevi
Deleteশীর্ষাসন - তিনটেই আছে।
ReplyDelete