গাড়িটা ঘিরে ধরেছিল বঙ্গরক্ষকের দল। ঋষভ
চৌহানকে হিড়হিড় করে টেনে নামাল। আজ একটা হেস্তনেস্ত না করে ছাড়বে না।
এই
গ্যাংটা খুব উঠেছে আজকাল। আগে সাধারণতঃ চুপচাপ থাকত, “অবাঙালি হঠাও” স্লোগান শোনা
যেত মাঝেমধ্যে। এখন রীতিমত সশস্ত্র আক্রমণ করে।
এদের
টার্গেট মূলতঃ কলকাতার অবাঙালিরা। আর তনিমা পালিতের মত বাঙালি মহিলার অবাঙালি
স্বামী হলে তো কথাই নেই। কুড়ি বছর হল তাঁদের বিয়ের, কলকাতায় দিব্যি আছেন তাঁরা।
বাংলাটা বুঝলেও তেমন বলতে পারেন না ঋষভ; ঐ ভাঙা ভাঙা বলে কাজ চালিয়ে নেন।
গাড়ির
ভেতর আটকে রেখেছিল ওরা তনিমাকে। দেখতে বাধ্য করেছিল। তনিমা ভয়ে চোখ বন্ধ করে
ফেলছিলেন বারবার, কিন্তু ওরা নাছোড়বান্দা।
এদের
পরীক্ষার পদ্ধতি খুব সহজ। মানুষকে টেনে নামায়, নামিয়ে দু’তিনটে ইংরিজি বাক্য
অনুবাদ করতে দেয়, না পারলে বা ভুল বললে গণপ্রহার। ঋষভ এমনিতেই রোগাপট্কা,
পনেরো-কুড়িজনের সঙ্গে এঁটে ওঠার কোনওরকম সম্ভাবনা নেই। আর পুলিশও এদের ব্যাপারে
নাক গলায় না।
এই একুশে
ফেব্রুয়ারির আশেপাশে এদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। বুদ্ধি খাটিয়ে এই কটা দিন কলকাতার বাইরে
কাটিয়ে আসা উচিত ছিল।
ঋষভের এই
অবস্থার জন্য আজ তিনিই দায়ী। বারবার বলেছিল ব্যাঙ্গালোর যেতে, বেশি মাইনের চাকরি
পাচ্ছিলেন দু’জনেই, কেন জেদ করে থেকে গেলেন তিনি?
*
কিন্তু
আশ্চর্য কাণ্ড, ঋষভকে ছেড়ে দিল এরা। রীতিমত সরি-সরি বলে একশা করে গাড়িতে তুলে দিল।
“কিছু মনে
করবেন না স্যার। অবাঙালি তো কী হয়েছে, আপনি যা বাংলা বলেন তা অনেক বাঙালিও বলতে
পারেন না। আপনারা থাকলে ভাষার ভাল হবে।”
*
“এটা কী
হল?”
“What?”
“তোকে ওরা
ছেড়ে দিল কেন?”
“Oh, they
gave me a piece of paper and asked me to translate that to Bangla, and I did.”
“তুই? তুই
বাংলা করলি? আর সেই বাংলা শুনে ওরা তোকে ছেড়ে দিল? কই দেখি, কী বাংলা করতে দিল।”
কাগজটা
বাড়িয়ে দিলেন ঋষভ।
“I love
celebrating Bhasha Divas. I am with you in this battle, because it is
necessary.”
“তুই কী
বললি?”
“আমি ভাষা
দিবস মানাতে ভালবাসি। এই যুদ্ধে আমি আপনাদের সাথ দেব, কেন কি এটা দরকার।”
*
(এই জাতীয়
একটা গল্প অনেকদিন আগে পড়েছিলাম, ধর্ম না জাতীয়তাবাদ কী একটা নিয়ে। তাই মৌলিক গল্প
বলতে একটু সঙ্কোচ হচ্ছে। তবে যদি কারুরই মনে না পড়ে আমি মোটামুটি নিরাপদ।
ও হ্যাঁ,
ভাষা দিবসের শুভেচ্ছা নেবেন।)
No comments:
Post a Comment