BANNER CREDITS: RITUPARNA CHATTERJEE
A woman with the potential to make it big. It is not that she cannot: she simply will not.
PHOTO CREDITS: ANIESHA BRAHMA
The closest anyone has come to being an adopted daughter.

Wednesday, August 21, 2019

যোগ্যতা

মূল গল্প: Test
লেখক: Theodore Thomas
অনুবাদ নয়, “ছায়া অবলম্বনে”

----

বড়রা বলেন যে বছর তিরিশ আগে ড্রাইভিং টেস্টটা নাকি ম্যাডক্স স্কোয়্যার ঘিরে হত। অত বাড়ি, যাতায়াতের রাস্তা, সবকিছুর মাঝখানে রাস্তা আটকে সার সার করে নাকি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকত টেস্টের সময়।

ইউটিউবে না দেখলে রিনি হয়ত বিশ্বাসই করত না কোনওদিন। চারপাশের লোকজনের অসুবিধে যদি বাদও দেওয়া যায়, ঐটুকু জায়গায় কে ভাল গাড়ি চালাতে পারবে আর কে পারবে না সেটা কীভাবে বোঝা সম্ভব?

আজকাল ব্যাপারটা অনেক ভদ্রসভ্য হয়ে গেছে। রাজারহাট ছাড়িয়ে আরও খানিকটা গেলে ওদের আলাদা ক্যাম্পাস, সেখানে ট্রেনিং সেন্টার গেস্টহাউস হাসপাতাল ক্যাফেটেরিয়া সবকিছু আছে। এক মাস থেকে সারাদিন রীতিমত থিয়োরি প্র্যাক্টিকাল ক্লাস করে তবে পরীক্ষা দিতে হয়।

রীতিমত পাকা হাত না হলে পাশ করা সহজ নয় আজকাল। পাশের হার নাকি খুব কম। সাইটে ঠিক হিসেব দেওয়া না থাকলেও দু’তিনটে সোর্স রিসার্চ করে জানিয়েছে যে মাত্র এক শতাংশ পাশ করে।

এক শতাংশটা রিনির মতে অসম্ভব। ফেসবুকে তার বন্ধুদের মতও তাই। তবে এক শতাংশ না হলেও হার যে বেশ কম, সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

তবে এর ভাল দিকও আছে। কলকাতার রাস্তায় অ্যাক্সিডেন্ট ব্যাপারটা আর হয়না বললেই চলে।

রোজই সাত-আটজনের পরীক্ষা থাকে। আজ রিনির। প্রথমে ক্যাম্পাসের ভেতরে আর বাইরে গাড়ি চালাতে হবে। সঙ্গে থাকবে ট্র্যাকার। বাকিটা ইন্সটিটিউটের ভেতর।

পাশ করলে কাল থেকে কলকাতার রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামবে।

আজ পাঁচ বছর হল সোসাইটির ভেতরে গাড়ি চালাচ্ছে রিনি। ব্যাপারটা বেআইনি হলেও কেউ কিছু বলেনা। সোসাইটিতে আজ অবধি দুর্ঘটনা ঘটেনি, কাজেই কেউ অত ভাবে-টাবে না।

তাই এসব পরীক্ষা রিনির কাছে নেহাৎই ফর্ম্যালিটি। একের পর এক মক টেস্ট দিয়ে ওর সব মুখস্থ। স্বাভাবিকভাবেই কোথাও আটকাল না। ক্যাম্পাসের বাইরে ফাঁকা রাস্তায় চালিয়ে ফেরার পথেই ঘটল ব্যাপারটা।

ব্রেক যে করেছিল সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহই নেই রিনির। গাড়িটাও টিপটপ অবস্থায় ছিল, কাজেই বাচ্চাটার চাপা পড়ার কোনও কারণই ছিল না।

কিন্তু অ্যাক্সিডেন্টটা হল। আর তারপরই ডিভাইডারে ধাক্কা খেল গাড়িটা। তারপর আর কিছু মনে নেই রিনির।

*

ঘুমটা ভাঙল হাসপাতালের বেডে। বেশ বড় কেবিন। খানিকক্ষণ এদিক-ওদিক হাতড়ে কলিংবেল টিপল রিনি।

যিনি ঢুকলেন তাঁর বয়স বছর চল্লিশ হবে, জামায় ইন্সটিটিউটের লোগো। নামের ট্যাগটাও দেখল রিনি: অস্মিতা।

“কনগ্র্যাচুলেশনস রিনি। আপনি পাশ।”

এটা নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশই ছিল না অবশ্য। কিন্তু তার আগে পুরো ব্যাপারটা বোঝা দরকার।

“আমার কী হয়েছিল?”

“চোট লাগেনি। ঐ, নার্ভের জন্য একটা হালকা সেডেটিভ দেওয়া ছিল। এমনিতে আপনি পুরোপুরি ফিট।”

“কিন্তু অ্যাক্সিডেন্ট...?”

“আপনি কী করছিলেন আমরা ইন্সটিটিউট থেকে লাইভ ট্র্যাক করছিলাম তো। অ্যাক্সিডেন্টটা যে আপনার দোষে হয়নি সেটা আমরা জানি।”

ভাল সিস্টেম বলতে হবে।

“আর বাচ্চাটা?”

“কোন্‌ বাচ্চা? ওঃ, যাকে চাপা দিলেন? না, সে বাঁচেনি।”

একমুহূর্তের জন্য রিনির মনটা খারাপ হয়ে গেলেও সেটা পরের কথাতেই ঠিক হয়ে গেল গেল।

“নিন, সই করুন। তবে হ্যাঁ, পড়ে সই করবেন।”

“না না, পড়ার দরকার নেই। এটা আমার অ্যাক্সেপ্টেন্স তো? যে আমি কাল থেকেই গাড়ি চালাব?”

“হ্যাঁ। আপনি যদি এক মাসের বেশি দেরি করেন আপনাকে কিন্তু পরীক্ষাটা আবার দিতে হবে।”

“না না, তার প্রশ্নই উঠছে না। গাড়ি রেডিই আছে। আজ চালাতে পারব না, না?”

হাসলেন অস্মিতা। “একটা দিন সবুর করুন না। এই যে, এখানটায়।”

*

ফর্মটা হাতে নিয়ে গম্ভীর মুখে অস্মিতা বললেন, “আমরা আলোচনা করছিলাম যে এটাই আপনার রিঅ্যাকশন হবে।”

কিছু বুঝতে না পারলেও রিনির মাথায় এটুকু ঢুকল যে কোথাও একটা গণ্ডগোল হচ্ছে পুরো ব্যাপারটায়।

“বাচ্চাটা সত্যিকারের নয়, জানেন রিনি। শুধু ক্যান্ডিডেট দেখতে পায়, অনেকটা হলোগ্রামের মত। এটা কেন করি বলুন তো?”

“রিফ্লেক্স পরীক্ষা করার জন্য?”

আবার হাসলেন অস্মিতা। “সেটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক, না? নাঃ, আমরা তো ক্যান্ডিডেটকে ভাবতে বাধ্য করছি যে ব্রেক কাজ করছে না, তাই না? তাহলে তো রিফ্লেক্সের প্রশ্ন আসছে না।

“আসলে আমরা দেখি একটা বাচ্চাকে চাপা দেওয়ার পরের দিন কেউ পারে কিনা গাড়ি চালানোর মত মানসিক অবস্থায় থাকতে পারে কিনা।”

“সেটা তো আমি পারলাম।”

“ঠিক। আর সেইজন্যই আপনি এখন লাইসেন্স পাবেননা রিনি। কলকাতার রাস্তায় আপনাকে গাড়ি চালাতে দেওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক। যতদিন না এই বোধটুকু দেখা দিচ্ছে ততদিন পরীক্ষা দিতে থাকুন। তবে সেটা সাইকায়্যাট্রিক টেস্ট।”

“এটা কীধরনের ইয়ার্কি?”

কয়েক মিনিটের মধ্যেই সিকিওরিটিকে ডাকতে হল। তবে তারাও এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

*

ওটা এক শতাংশই ছিল। এখন আরও কম। ক্রমশঃ কমছে।

1 comment:

Followers