BANNER CREDITS: RITUPARNA CHATTERJEE
A woman with the potential to make it big. It is not that she cannot: she simply will not.
PHOTO CREDITS: ANIESHA BRAHMA
The closest anyone has come to being an adopted daughter.

Thursday, August 15, 2019

নিশীথের কথা


মূল গল্প: The Boarded Window
লেখক: Ambrose Bierce
অনুবাদ নয়, “ছায়া অবলম্বনে”

-----

আরএ মিল্ক কলোনির দিকটায় বাড়ি নিশীথের। শোনা যায় আগে পুলিশে ছিলেন, কিন্তু ঠিক কী পোস্টে কাজ করতেন কেউ জানেনা।

শুধু এটুকু জানে যে নিশীথ হাসেন না। অন্ততঃ গত পঁচিশ বছরে কেউ তাঁকে হাসতে দেখেনি, সেই বিনীতা মারা যাওয়ার পর থেকেই। বয়স বোধহয় পঁয়ষট্টি, তবে নির্জীব চোখ, তোবড়ানো গাল, কোঁচকানো চামড়া, সব মিলিয়ে নব্বই মনে হলেও দোষের কিছু নেই।

দ্বিতীয়বার আর বিয়ে করেননি নিশীথ। ছেলেমেয়েও নেই। একতলায় ছোট্ট একটা ফ্ল্যাটে থাকেন অনেক বছর ধরে। বোরিভলি ন্যাশনাল পার্কের নাম তখনও সঞ্জয় গান্ধীর নামে হয়নি। এ চত্বরে তখন হরিণ শুধু নয়, রীতিমত প্যান্থার দেখা যেত। এখনও দেখা যায় অবশ্য, এমনকি আইআইটি ক্যাম্পাসেও, তবে সে নেহাৎই বছরে একবার। তখনকার মত নয়।

পাড়ার ছেলেগুলো একবার বল আনতে গেছিল গত বছর। দরজাটা কোনও কারণে খোলা ছিল, ঢুকেই পড়েছিল ছেলেগুলো। ওরাই বলল, ওয়ানআরকে ফ্ল্যাট, সেখানে তক্তপোষ আর একটা আলনা ছাড়া ফ্ল্যাটে আর কোনও আসবাব নেই। টিমটিমে একটা আলো, জানালাটা অবধি বন্ধ, আলনা দিয়ে ঢাকা।

বল অবশ্য চাওয়ামাত্র দিয়েছিলেন নিশীথ। তবে একটাও কথা বলেননি। ভয় না পেলেও খানিকটা ঘাবড়ে গেছিল ছেলেগুলো।

বিনীতার সঙ্গে নিশীথের বিয়ে হয়েছিল তিরিশ বছর আগে। এদিকটা তখন নতুন তৈরি হচ্ছে, ভাড়া না নিয়ে বেশ খানিকটা ঝুঁকি নিয়েই একটা ফ্ল্যাট কিনে ফেলেছিলেন। ছ’দিন নিরিমিষ, সপ্তাহে একদিন মাছ, আর রবিবার হয় গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া নয় সিনেমা – সব মিলিয়ে একজনের রোজগারেও দিব্যি চলছিল সংসার।

বিনীতার রান্নার হাত ছিল চমৎকার। মাঝেমধ্যে বসে ভাবেন নিশীথ। এত বছর পর স্বাদ মনে না পড়লেও রান্নাঘরে দাঁড়ানো বিনীতার স্মৃতিটা এখনও মুছে যায়নি।

কীই বা দিতে পেরেছিলেন বিনীতাকে তিনি? হাজার কষ্টের মধ্যেও কিন্তু হাসিমুখে থাকত মেয়েটা, মনে পড়ল নিশীথের। তিনি বরাবর চুপচাপ, কিন্তু দু’জনের ভাগের কথা একাই বলে চলত।

তবে বড্ড ভুগত। এমনিতে শক্তসমর্থ ছিল, অসম্ভব খাটতে পারত। কিন্তু বড্ড ঘনঘন জ্বর আসত।

আর জ্বরে ভুগে ভুগেই তো...

দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নিশীথ।

ধুম জ্বর এসেছিল সেদিন বিনীতার। নিজের সীমিত জ্ঞান অনুযায়ী ওষুধ খাইয়ে, জলপটি দিয়ে হাওয়া করেও জ্বর নামেনি। শেষটায় তুলে দাঁড় করিয়ে মাথায় জল ঢেলে চান করিয়ে দিলেন নিশীথ। বিনীতা তখন প্রায় অবশ।

ফোনও ছিল না বাড়িতে। আর থাকলেও রবিবার ডাক্তার আসার প্রশ্নই ছিল না। আশেপাশে হাসপাতালও ছিল না, আর থেকেও বিশেষ লাভ হত না, কারণ সে রাতের মত বৃষ্টি এত বছরে আর দেখেননি নিশীথ।

উদ্‌ভ্রান্তের মত মিনিটকয়েক ঘুরে বাড়ি ফিরে আসেন নিশীথ। ততক্ষণে সব শেষ। ভেজা বেডশীটের ওপর পড়ে আছে বিনীতার নিথর দেহ।

পায়ে আর জোর পেলেননা নিশীথ। বসে পড়লেন মাটিতে।

রাত তখন এগারোটা। বৃষ্টি থামার নাম নেই। শ্মশানে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। আর কাকেই বা ডাকবেন এত রাত্রে?

চোখে জল আসাটাই হয়ত স্বাভাবিক ছিল নিশীথের, কিন্তু তার বদলে শরীর ভেঙে এল অবসাদ। বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়লেন একসময়।

ঘুমটা ভাঙল অনেক রাতে। ততক্ষণে কারেন্ট গেছে, ঘুটঘুটে অন্ধকার। স্পষ্ট বুঝতে পারলেন যে ঘরে কেউ আছে।

একটা খস্‌খসে আওয়াজ হল।

চোর?

বৃষ্টিটা বোধহয় একটু ধরেছে।

দরজাটা তো বন্ধ। জানালা দিয়েই ঢুকেছে তাহলে। অনেকবার বলেছিল বিনীতা শিক লাগাতে। শোনেননি।

তক্তপোষের দিকে কিছু একটা নড়ে উঠল না?

মাটিতে শুয়ে ঘষটে ঘষটে আলনাটার দিকে এগোলেন নিশীথ, চোখ তক্তপোষের দিকে। হাতড়ে হাতড়ে সার্ভিস রিভলভারটা পেলেন। ভাগ্য ভাল আওয়াজ হয়নি।

মাঝরাত্রে পুলিশের ঘরে কেউ ঢুকলে তাকে গুলি করা নিশ্চয়ই অপরাধ নয়। হতে পারে না।

আবার সেই খস্‌খসে আওয়াজটা। নড়াচড়াটা বিনীতার শরীরের কাছেই হল না?

গুলি চালালেন নিশীথ। ঝলসানিতে স্পষ্ট দেখতে পেলেন প্যান্থারটাকে পালাতে।

টর্চটা জ্বেলে প্রথমেই জানালাটা বন্ধ করলেন নিশীথ। তারপর গেলেন বিনীতার কাছে।

দু’টো ক্ষতচিহ্ন দেখতে পেলেন নিশীথ, গলায় আর বুকের কাছে। আর দেখতে পেলেন রক্ত, যে রক্তে ভেসে যাচ্ছিল বিনীতার শরীর। আশ্চর্য, এত ঘণ্টা পরেও একটুও জমাট বাঁধেনি।

হাত দু’টোও এলিয়ে পড়ে নেই আর, বরং শক্ত করে মুঠো করা। হতভম্ব হয়ে বিনীতার মুখে টর্চ ফেললেন নিশীথ। তারপর এগিয়ে গেলেন, আরও অনেক অনেক অনেক কাছে, একদম মুখের সামনে।

বিনীতার দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা ছোট্ট কালো জিনিসটা কোনও জানোয়ারের কানের অংশ ছাড়া আর কিছু হতেই পারে না।

জানালাটা সেদিন থেকেই বন্ধ নিশীথের। আর খোলেননি।

1 comment:

Followers